রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ইউরেনিয়ামের দ্বিতীয় চালান পৌঁছাল রূপপুরে

পাবনা প্রতিনিধি
  ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

প্রথম ইউনিটের ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের এক দিন পর পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্পে পৌঁছাল ইউরেনিয়ামের দ্বিতীয় চালান।

পাকশী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশীষ কুমার স্যানাল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে নাটোর-কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক দিয়ে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রের

ভেতরে প্রবেশ করে।

ইউরেনিয়ামের দ্বিতীয় চালানের গাড়িবহর ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে নাটোরের বনপাড়া ও পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া হয়ে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় পৌঁছালে কর্মরত বাংলাদেশি ও রাশিয়ান কর্মীরা গাড়িগুলোকে স্বাগত জানান।

এদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্পে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো আনার সময় মহাসড়কে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তাবলয় ছিল। নিরাপত্তার জন্য ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পাবনা-নাটোর-কুষ্টিয়া মহাসড়ক দিয়ে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ইউরেনিয়াম পৌঁছার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডক্টর শৌকত আকবর জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে রাশিয়া থেকে দ্বিতীয় চালানের ইউরেনিয়াম বিশেষ বিমানে ঢাকায় পৌঁছায়। প্রথম চালানের মতোই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে আমদানিকৃত পারমাণবিক জ্বালানি সড়ক পথে রূপপুরে নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে আরও পাঁচটি চালান দেশে আসবে। প্রাথমিক পর্যায়ে মোট সাতটি চালানে আসা জ্বালানি দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে এক বছর ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দু'টি ইউনিটে বিদু্যৎ উৎপাদিত হবে।

অপরদিকে, প্রথম চালান আসার পর রূপপুরের পারমাণবিক বিদু্যৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি এরই মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনায় উন্নীত হয়েছে। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিস্বরূপ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কাছে জ্বালানি সনদ হস্তান্তর করেছে রাশিয়া।

ডক্টর শৌকত আকবর বলেন, 'রূপপুর এখন আর প্রকল্প নয়- এটা কিন্তু এখন একটি পারমাণবিক স্থাপনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাশিয়ার পক্ষ হতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পারমাণবিক জ্বালানি সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর হয়েছে। প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজে সব ধরনের যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হয়েছে। রাশিয়া প্রতিটি মালামাল ও যন্ত্রপাতি আমাদের এখন বুঝিয়ে দিচ্ছে। এখন কমিশনিং শুরু হবে।'

সংশ্লিষ্ট সনদ লাভের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলও প্রস্তুত করে তাদের পদায়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি, পরিবহণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ সব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। কোথাও কোনো ফাঁক রাখা হয়নি। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার সুযোগ নেই।

রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রূপপুরে বিদু্যৎ উৎপাদনে যে জ্বালানি ব্যবহার হবে তা চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া তিন বছর বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। প্রতিদিন জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। একবার জ্বালানি লোডের পর প্রথম তিন বছরের জন্য বছরে একবার করে (এক-তৃতীয়াংশ) এবং পরবর্তী সময়ে দেড় বছর পরপর জ্বালানি পরিবর্তন করতে হবে। ফলে জ্বালানির কারণে দেশের অন্যান্য কেন্দ্র যেভাবে বন্ধ থাকে, এখানে ওই ধরনের কোনো সংকট হবে না। নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রথম চালানের জ্বালানির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় চালানের জ্বালানি রাশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে।

এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকালে রাশিয়া থেকে ঢাকায় আসার পর ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার করা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের 'ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল' বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান রূপপুরে পৌঁছায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে