রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা ও শৈল্পিক সৌন্দর্যে সেজেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ঝিনুকা আকৃতির দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর নবনির্মিত আইকনিক রেলস্টেশনটি এখন দৃশ্যমান। পানির ফোয়ারার মধ্যে বিশালাকৃতির মুক্তা ঝিনুকটি দৃষ্টিনন্দন ভাষ্কর্য। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক মানের রেলস্টেশনটি নির্মিত হয়েছে। সমুদ্রসৈকত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ঝিলংজায় ২৯ একর জমিতে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই রেলস্টেশনটি। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শুধু রেল যোগাযোগের জন্য নয়, পর্যটনের নতুন অনুষঙ্গ এই স্টেশন। বিশেষ করে সড়কপথের দীর্ঘযাত্রার যানজটের ভোগান্তি ছাড়াই ভ্রমণপিপাসুরা সহজেই কক্সবাজার পৌঁছার পর সৈকতে সমুদ্রের জল ছুঁতে পারবে। আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলস্টেশন উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে নবরূপে সেজেছে এই রেলস্টেশনটি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ছয় তলাবিশিষ্ট বিশাল ঝিনুকাকৃতির রেলস্টেশনটিতে পর্যটকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রযেছে। নান্দনিক ডিজাইনে গড়া স্টেশনটির নিচতলায় রয়েছে টিকিট কাউন্টার, ছয়টি লিফট ও দুটি চলন্ত সিঁড়ি, অভ্যর্থনা কেন্দ্র, লকারসহ নানা সুবিধা। দ্বিতীয়তলায় শপিংমল ও রেস্তোরাঁ। তিনতলায় তারকা মানের হোটেল, যেখানে ৩৯টি রুমে থাকার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। থাকছে মসজিদ, শিশু যত্ন কেন্দ্র ও চলন্ত সিঁড়ি এবং ভিআইপিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ড্রপ এরিয়া। স্টেশনে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থাকবে তিনটি বড় জায়গা। এ ছাড়া আগত পর্যটকদের কথা চিন্তা করে রাতের ট্রেন সকালে কক্সবাজার পৌঁছে মালপত্র স্টেশনের লকারে রেখে, সারা দিন কক্সবাজার শহরের সমুদ্রসৈকত বা পর্যটন স্পট ঘুরে রাতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আইকনিক রেলস্টেশনটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বমানের সব সরঞ্জাম।

রেলস্টেশনের নিকটবর্তী বাসিন্দা ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদ ও আবদুলস্নাহ নুর বলেন, সারা দেশের সঙ্গে পর্যটন নগরীর রেল যোগাযোগ স্থাপন কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এক দিন পর দোহাজারী-চট্টগ্রাম-ঢাকার ট্রেন কক্সবাজারে ট্রেন ছুটে আসবে। বিশেষ করে এই ট্রেন যাতায়াতে কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়বে।

কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বলেন, স্থাপত্যশৈলী নজরকাড়া আইকনিক এই স্টেশনটি নির্মাণের সময় চীন, ফান্স, বেলজিয়াম, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে ১১০ জন বিদেশিসহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী এবং শ্রমিকসহ ছয় শতাধিক শ্রমিকের চার বছরের কাষ্টার্জিত শ্রমে ঝিনুকাকৃতি রেলস্টেশনটি এখন দৃশ্যমান। এটি দৃশ্যমান হওয়ার পর ঝিনুক আকৃতির রেলস্টেশন, পানির ফোয়ারা ও অন্যান্য সৌন্দর্য অবলোবন করতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের চাপ বাড়ছে। এটি একটি বিনোদনের স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবে।

কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মো আশরাফুল আলম বলেন, রেলস্টেশন ভবনের ছাদে মূল স্টিল ক্যানপির ও ফুট ওভারব্রিজ, তিনটি পস্ন্যাটফরম ও স্টেশন ভবনের ফিনিশিংয়ের কাজ শেষ। পুরো স্টেশনের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে চারপাশে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত কাঁচ। ছাদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক স্টিল ক্যানোফি। যাতে দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না স্টেশনে। আর অত্যাধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণেই এটিকে বলা হচ্ছে গ্রিন স্টেশন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে সেই স্বপ্নের রেল যোগাযোগ এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। রেললাইনটি পুরোপুরি চালু হলে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে পর্যটনশিল্পে। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেলপথের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, রেল যোগাযোগ শুরু হলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা কক্সবাজারের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার-রামু ৩ আসনে সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমল বলেন, বিশ্বমানের অত্যাধুনিক আইকনিক রেলস্টেশন এখন দৃশ্যমান। আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে উদ্বোধন করবেন কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন। এর ফলে কক্সবাজারের পর্যটনসহ অর্থনীতিতে বৈপস্নবিক পরিবর্তন আসবে। উদ্বোধনের পর তিনি মহেশখালীতে পৌঁছে সেখানে জনসভায বক্তব্য রাখবেন।

উলেস্নখ্য, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এই মেগা প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এই মেগা প্রকল্পের দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে