আজকের যায়যায়দিন

পোশাক কারখানায় শ্রমিক আন্দোলনে স্পষ্টত বিএনপি ও তার দোসরদের কালো হাত আছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলের আন্দোলনের নামে চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে। একে প্রতিরোধ করতে হবে এবং নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে ভিন্নমতের প্রতিকূল স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছি আমরা। এ সময় তিনি নিরীহ শ্রমিকদের কারও উসকানি ও গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান।

শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় এ আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'শ্রমিকদের অধিকাংশ দাবির সমাধান হয়ে গেছে। বাকিটা সমাধানে শ্রমিকরা এগিয়ে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি মনিটরিং করছেন।'

চট্টগ্রামে সিন্ডিকেটের কবলে পোলট্রি খাত

শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, 'শ্রমিকরা নিজেদের ক্ষতি নিজেরা করবে না বলে আমরা আশা করি। শ্রমিকরা বিভ্রান্ত হলে ক্ষতিটা দেশের এবং শ্রমিকের নিজের হবে। গুজব রটনাকারীদের ক্ষতি হবে না।'

তিনি বলেন, 'আজ বিভিন্নভাবে সরকারবিরোধী চক্রান্ত চলছে, দেশে-বিদেশে সরকারবিরোধী তৎপরতা চলছে।'

২৮ অক্টোবরে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'এখন স্বাভাবিক আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর তারা অস্বাভাবিক পথে চলতে শুরু করেছে। তাদের পুরনো রাজনীতির অভ্যাস অগ্নিসন্ত্রাসের উপাদান যুক্ত করেছে। এসব করে তারা শেখ হাসিনাকে হটানোর জন্য সবশেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে পারছে না, চোরাগোপ্তা হামলা করছে।'

দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'সামনে কঠিন পথ। আপনাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে, যেসব জায়গায় তারা হামলা চালায়, সেসব জায়গায় আপনাদের উপস্থিতি জোরদার করতে হবে। প্রস্তুতি নিয়ে, জায়গা চিহ্নিত করে অবস্থান নিয়ে সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে।'

তিনি বলেন, 'সামনে আরও কঠিন পথ আমাদের পাড়ি দিতে হবে। সেভাবে নিজেদের প্রস্তুত করুন। এটা শুধু নির্বাচনের জন্য না, এটা আদর্শের লড়াই। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে পক্ষের শক্তির লড়াই, আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। উন্নয়ন আর অর্জনের জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। এই যুদ্ধ জয়ের প্রতিজ্ঞা নিয়েই নেমেছে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা। এই সংকট আস্তে আস্তে কেটে যাবে।'

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হলে আমাদের হাতে সময় একেবারেই কম। নির্বাচনের আগে আমাদের দু'টি কাজ। এর মধ্যে একটা হলো নির্বাচনের প্রস্তুতি। আরেকটা কাজ হলো বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলের আন্দোলনের নামে চোরাগোপ্তা হামলা মোকাবিলা এবং নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখা।'

পোশাক শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে বিএনপির উসকানি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'ইন্ধন তো আছেই। এখানে পরিষ্কারভাবে বিএনপি এবং তার দোসরদের কালো হাত বিস্তৃত হয়ে আছে। তারাই উসকানি দিচ্ছে, তারাই গুজব সৃষ্টি করছে। উসকানি আর গুজব সৃষ্টি করে তারা নিরীহ শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করছে। কোথায় ছিল শ্রমিকদের বেতন ৮০০ টাকা। আর সেই বেতন এখন ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এখন দেশের অবস্থাও বুঝতে হবে। নেত্রী পরিষ্কার করে সেটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে বিজিএমই-এর দু'একজন নেতাও ছিলেন। তারা শুনেছেন। এ ব্যাপারে বেশিরভাগ সমাধান হয়ে গেছে। তবে কোনাবাড়ি ও আশুলিয়া, এই দুইটা জায়গায় কিছু সমস্যা আছে। আমরা মনে করি, আমাদের শ্রমিকরা বর্তমান বাস্তবতার বিষয়গুলো উপলব্ধি করে সমাধানে এগিয়ে আসবেন।'

যৌথসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডক্টর হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপস্নব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, সকালে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বর্তমান বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা যেটা সবার সামনেই পরিষ্কার। আমার দেশের গণতন্ত্র কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে। যে চ্যালেঞ্জটা এসেছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, জঙ্গিবাদী শক্তি ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির কাছ থেকে। এর আগেও তারা গণতন্ত্রে আঘাত এনেছে।'

শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক'- এই সেস্নাগান নূর হোসেন বুকে ও পিঠে লিখে রাজপথের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। নূর হোসেনের রক্ত গণতন্ত্রকে শিকলমুক্ত করার লড়াইয়ে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এটা ছিল অনেকটা টার্নিং পয়েন্টের মতো। আজকের দিনে অনেক বাধা বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা আমাদের দেশে অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্রকে শিকলমুক্ত করতে আমাদের দেশে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে আপসহীন সংগ্রামের ভূমিকা পালন করেছিলেন আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, 'পৃথিবীতে গণতন্ত্র নিয়ে যত কথাই বলুক, গণতন্ত্র কোথাও পারফেক্ট নয়। গণতন্ত্রের ত্রম্নটি আছে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক বড় বড় শক্তিগুলো, যারা নিজেদের গণতন্ত্র মানবাধিকারের প্রবক্তা ভাবেন, তাদের গণতন্ত্রেও অনেক ত্রম্নটি লক্ষ্য করা যায়। আমরা আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে অনেকটা ত্রম্নটিমুক্ত করেছি।'