রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপ ছাড়া সমঝোতা তৈরি হওয়া সম্ভব নয়

এডিটরস গিল্ডের বৈঠকে বক্তারা
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

'বিএনপি মূলত নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে চায় এবং দেশে একটি অরাজকতা তৈরি করতে চায়'-এমন মন্তব্য করে বক্তারা বলেছেন, সংলাপের দরজা অনেক আগে বন্ধ হয়েছে। তবে সংলাপ ছাড়া সমঝোতা তৈরি হওয়া সম্ভব না। বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে দুই পক্ষকে বসেই।

শনিবার এডিটরস গিল্ড আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি ও একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু।

বৈঠকে সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, "বলা হচ্ছে, ভোট ও ভাতের অধিকার অবরোধের লক্ষ্য। কিন্তু এখানে লক্ষ্য হচ্ছে শেখ হাসিনাকে উৎখাত। এটা বিএনপিও বলে, ওয়ান ম্যান পার্টিও বলে, যার কোনো অস্তিত্ব ছিল না, হঠাৎ সামনে এসেছে সেও বলে। বামপন্থি,

ডানপন্থি সবাই বলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এখন কথায় কথায় আমরা সংলাপের কথা বলি। এটা স্বাভাবিক। এখন কথা হচ্ছে, সংলাপের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে ২০১৪ সালে। কেন বন্ধ হয়েছে? যখন এর চেয়ে আরও ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস হয়েছিল, বেগম জিয়া সেই ঐতিহাসিক ৯০ দিনের কর্মকান্ড পরিচালনা করছিলেন। তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজে ফোন করে উনাকে বললেন, 'আসেন আমরা কথা বলি।' চায়ের দাওয়াত দিলেন। তখন বেগম জিয়া যে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছিলেন, তার পরে সংলাপের কথা কীভাবে বলা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাল ছাড়েননি। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত চলছে যে, শেখ হাসিনাকে সরে যেতে হবে।''

অধ্যাপক আব্দুল মান্নান আরও বলেন, 'শেখ হাসিনাকে যদি সরে যেতে হয়, তাহলে সংলাপে লাভ কী? এখন বলছে, শেখ হাসিনাকে সরে যেতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। তারপর তারা সংলাপে যাবে। তাহলে কী নিয়ে সংলাপ করবে? আগে আন্দোলন হয়েছে, সংলাপও হয়েছে। মান্নান ভূইয়া আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সংলাপ হয়েছে, ফলাফল শূন্য। কারণ, আমরা কতগুলো বেসিক বিষয়ে একমত হতে পারিনি। বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে মেনে নেয়নি, এরকম প্রচুর মানুষ আছে। এখনও সুযোগ পাইলে বলে যে, পাকিস্তান তো ভালো ছিল। দ্বিতীয়ত, যেই সংবিধান ৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা হয়েছে, সেই সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিয়ে নতুন সংবিধান করার কথা বলা হয়। তাদের সঙ্গে কীসের সংলাপ হবে? যুক্তরাষ্ট্রের এত পুরনো সংবিধান কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু বেসিক কাঠামো ঠিক রেখেছে। বিএনপি মূলত নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে চায় এবং একটি অরাজকতা তৈরি করতে চায়।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মন্সুর বলেন, 'কোনো পক্ষই ৪০ শতাংশের বেশি জনগণের ভোট পায়নি এখনও। দুই পক্ষই কাছাকাছি অবস্থানে আছে। এখানে ভারসাম্যটা বুঝতে হবে যে, জনগণ কিন্তু দুই পক্ষেই আছে। সেখানে কিন্তু কোনো পক্ষকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ চলবে না। সেজন্য কোনো না কোনো সময় আমাদের বসতে হবে। প্রত্যেকটা যুদ্ধের শেষে কিংবা মাঝে কিন্তু আলোচনা হয় এবং সমঝোতা হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'সামনে নির্বাচন। সেটা হয়তো হয়ে যাবে। হয়ে গেল, কিন্তু সমস্যার কি সমাধান হলো? হলো না। আমরা যেদিকে এগোচ্ছি, প্রত্যেক নেতাকে যদি আমরা জেলে ভরে দেই, সেটায় কি সমাধান হবে? নাকি সমঝোতায় আসতে হবে, যাতে আমরা দেশকে সামনের দিকে ঠিকভাবে নিয়ে যেতে পারি। অবরোধের লক্ষ্য আমরা সবাই জানি, সরকারকে কোনোভাবে কোণঠাসা করে ফেলে দেওয়া যায়, সেটা একটা লক্ষ্য। ফেলতে না পারলে ব্যর্থতা, ঘুরে ঘুরে আবার আসবে। কিন্তু বিষয়টা তো শেষ হয়ে গেল না। বিষয়টার সমাধান করতে হবে দুই পক্ষকে বসেই।'

দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার ইমিরেটাস এডিটর নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, 'বিএনপি নির্বাচনে না এলে আমি খুব দুঃখ পাব। বিএনপি যদি সরকার পতন ঘটাতে পারে করুক, না পারলে তারা আস্তাকুঁড়ে যাবে। এখন কথা হচ্ছে, তারা জনসমর্থন দিয়ে করতে পারছে না, এটা আমরা দেখছি।'

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ বলেন, 'আইআরের রিপোর্ট কিন্তু বলছে- ৭০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনার পক্ষে, ৪০ শতাংশ বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকতে পারে এবং ৫৬ শতাংশ মানুষ বলছে, বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এখানে বিএনপি'র যে সামগ্রিক অবস্থা, তাতে তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাহায্য নিয়ে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছে। এটা তো আমাদের কাছে পরিষ্কার, কিন্তু এরপর কী? তারপরও কি এই রাজনীতি দেখতে চাই?'

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল বলেন, 'অবরোধ বিএনপি'র একটি কৌশলগত অবস্থান। সিভিক স্পেস নাই বলে অবরোধ একটা কৌশল। অবরোধের ঘোষণা যখনই আসছে, তখনই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু প্রাপ্তি কী সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। অবরোধ শেষ হলে আমরা বুঝব প্রাপ্তি কী।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে