রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাতে সন্তানের জন্ম সকালে মারা গেলেন সাফজয়ী রাজিয়া

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

বয়সভিত্তিক দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন রাজিয়া খাতুন। অনূর্ধ্ব-১৮ নারী সাফেও দেশের হয়ে শিরোপা জিতেছেন তিনি। সিনিয়র দলে খেলার আগেই বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েন রাজিয়া। নারী ফুটবলের সেই পরিচিত মুখ রাজিয়া আর নেই। বৃহস্পতিবার ভোরে প্রসবকালীন জটিলতায় মারা যান তিনি। মৃতু্যর আগের দিন রাতে সন্তান প্রসব করেন এই ফুটবলার। প্রসবের পর তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। সেই রক্তক্ষরণেই প্রাণ হারিয়েছেন রাজিয়া। তার মৃতু্যতে দেশের ফুটবলে নেমে এসেছে গভীর শোক। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ বাফুফের সব কর্মকর্তা কর্মচারী এই ফুটবলারের মৃতু্যতে আন্তরিক শোক ও তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।

সাবেক সতীর্থের মৃতু্যতে শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের কয়েকজন ফুটবলার। ছাত্রীর মৃতু্যতে শোকাহত রাজিয়া এবং বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন।

রাজিয়ার খালাতো ভাই মো. রোকোনুজ্জামান মোড়ল বলেন, 'বুধবার রাতে রাজিয়া গ্রামের বাড়িতে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এরপর তার কিছু জটিলতা দেখা দেয় এবং ভোর ৪টার দিকে মারা যান তিনি।'

অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও রাজিয়াকে বাঁচানো যায়নি। রোকনুজ্জামান আরও বলেন, 'জটিলতা দেখা দেওয়ার পর রাতে অ্যাম্বুলেন্স আনা হয়েছিল। কিন্তু একটা সময় অবস্থা ভালো হওয়ায় সেই অ্যাম্বুলেন্স ফেরত পাঠানো হয়। এরপর ভোরের দিকে হঠাৎ করেই মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েন রাজিয়া। পরে আবার অ্যাম্বুলেন্স এনে তাকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।' পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে বৃহস্পতিবার বাদ আসর রাজিয়াকে দাফন করার কথা রয়েছে। 

এক সময় বয়স ভিত্তিক দলে নিয়মিত ছিলেন রাজিয়া খাতুন। বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েছেন বছর চারেক আগে। এরপর ঘরোয়া লিগ খেলেছেন। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। তাই রাজিয়াকে খুব কাছ থেকেই চেনেন তিনি। জাতীয় দলের সাবেক এই কোচ বলেছেন, 'আমি মাত্রই শুনলাম। খুব খারাপ লাগছে। রাজিয়া অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ ছিল। আলস্নাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুক। তার পরিবারকে ধৈর্য্য ধারণ করার তৌফিক দিক।'

রাজিয়ার আকস্মিক মৃতু্যতে খুবই ব্যথিত জাতীয় দলের সতীর্থ সানজিদা আক্তার। ভারত থেকে ব্যথিত কণ্ঠে বলেছেন, 'আমাদের ক্যারিয়ার একই সময়েই শুরু মূলত। ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার পর ও লিগ খেলেছে এবং পরবর্তীতে বিয়ে করেছে। বাচ্চা হওয়ার পর মারা গেছে শুনে খুবই খারাপ লাগছে। আমরা একজন বন্ধু হারালাম।'

এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পর গতবার কাচারীপড়ার হয়ে নারী লিগ খেলেছিলেন রাজিয়া। বিয়ের দুই বছরের মাথায় অকাল মৃতু্য হলো এই সাবেক ফরোয়ার্ডের। ২০০১ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্ম নেয়া রাজিয়া বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উত্থানের শুরুর দিকের একজন। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল (সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ এশিয়া) চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৩ ও ১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে খেলেছিলেন রাজিয়া। পরের বছর ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়ন দলেও ছিলেন তিনি। সিনিয়র দলের সঙ্গেও তিনিও ক্যাম্প করেছেন কিছু দিন। পারফরম্যান্সে অবনতির জন্য ২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েন এই ফুটবলার।  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে