বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দেশের চলমান সংকটে সরকারের আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে

সম্মিলিত নাগরিক সমাজের আলোচনা সভায় বক্তারা
যাযাদি ডেস্ক
  ০১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
দেশের চলমান সংকটে সরকারের আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার সম্মিলিত নাগরিক সমাজ আয়োজিত 'বাংলাদেশে বিরাজমান সংকট :উত্তরণ' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা -সংগৃহীত

দেশের চলমান সংকটে সরকারের আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে মন্তব্য করে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ নামে সংগঠনটির নেতারা বলেন, 'আমাদের রাজনৈতিক সক্ষমতা-দক্ষতা নিয়ে যে আত্মতুষ্টি, সেটা যে কতটা মেকি ছিল তার প্রমাণ পাওয়া গেল ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়েছিলাম, সেটি এখন সংকটে আছে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে সার্বিকভাবে আস্থা তৈরি করতে হবে।'

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ আয়োজিত 'বাংলাদেশে বিরাজমান সংকট: উত্তরণ' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

1

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, 'দেশের চলমান সংকটে সরকারের আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। সরকারকে আত্মবিশ্লেষণ করে ঠিক করতে হবে, কী কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হলো। সরকারের কোনো কথায় ভুল ছিল কিনা সেটা নিয়ে বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। এই প্রক্রিয়া প্রশাসনের বল প্রয়োগের ভিত্তিতে হলে হবে না। কারণ বল প্রয়োগের প্রক্রিয়া জাতিকে এক করতে পারে না। এখানে বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো সুষ্ঠু সমাধান হবে না। আর সকাল, বিকাল, দুপুর যে প্রশংসা করে, সে কখনো প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। যারা মতের অমিল বলতে পারে সে-ই প্রকৃত বন্ধু।'

তিনি আরও বলেন, 'স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ আছে, যাদের সংকটের সময় পাওয়া যায় না, যা আমরা এখন দেখছি। ছাত্র সমাজ যৌক্তিক দাবির জন্য যে আন্দোলন করছিল, তা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় বহু প্রাণহানি হয়েছে। যারা নিহত হয়েছে, তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা থাকবে।'

দেশের ক্ষয়ক্ষতি যে পরিমাণ হয়েছে, তাতে এটি উত্তরণ করতে অনেক সময় লাগবে জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'দেশে বর্তমানে বহু সংকট চলছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক সংকট এবং রাজনৈতিক সংকট আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনার সংকটও আমাদের এখানে আছে। আমাদের এখানে প্রশাসনের যেভাবে কাজ করার কথা সেভাবে হচ্ছে না। যখন কাউকে কাস্টডিওতে নিয়ে কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় না। কিন্তু তারপরও সেটা করা হয়। এগুলো তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।'

খলীকুজ্জমান বলেন, 'আমাদের সঠিক তথ্য প্রবাহের সংকট আছে। মানুষের কাছে এত বেশি ভুল তথ্য যাচ্ছে, এর মধ্য থেকে আমরা সঠিক তথ্য পাচ্ছি না। আরেকটি হলো অস্তিত্বের সংকট। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়েছিলাম, সেটি এখন সংকটে আছে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে সার্বিকভাবে আস্থা তৈরি করতে হবে। আর এটা করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে, তাদের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সেখানে নেতৃত্ব দিতে হবে শেখ হাসিনাকে। সবাইকে একসঙ্গে নেওয়ার যে ব্যবস্থা, সেটা তাকে করতে হবে। তা না হলে লোকজন বিচ্ছিন্নভাবে থেকে গেলে একা চেষ্টা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। কাজেই এই প্রক্রিয়াটি হতে হবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকও অন্তর্ভুক্তমূলক।'

বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ বলেন, 'আজ যে অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক সংকট, রাজনৈতিক সংকট; তার চেয়েও বড় যেটা অস্তিত্বের সংকটের কথা উঠেছে এ বিষয়ে বেশি করে ভাবতে হবে। আগামীতে এটা নিয়ে আমাদের কাজও করতে হবে। বিটিভিতে কয়েক দফায় হামলা ও লুট হয়েছে। অর্থাৎ একটা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়ে পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে এবং সেগুলোর চারপাশে যে ধরনের সুযোগ থাকা দরকার, সেখানেও পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে। এই জায়গাগুলো আমাদের ভাবতে হবে।'

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য রশিদ ই মাহবুব বলেন, 'স্বৈরশাসক গেলেও তাদের প্রেতাত্মারা রয়েছে। যখনই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের বিপদে ফেলার চেষ্টা হয়। সরকারকে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। ঠিক সময়ে ঠিক কাজ করতে পারছে না সরকার। সরকারের কোনো নীতি নিয়ে নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয় না। সমাজের সর্বস্তরে এক ধরনের লোভী ভাব দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। যারা চোর, লুটেরা তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।'

ইনস্টিটিউট অব ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান বলেন, 'শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে এমন কিছু ঘটতে পারে, সেটা সরকার কেন বুঝতে পারল না, তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এখন ছাত্রদের আন্দোলনে থাকার যৌক্তিকতা নেই। তারপরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কেউ কেউ আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করছে।'

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, 'গত জুলাই মাসের শুরু থেকে দেশের যে অবস্থা দেখছি, তাতে অবস্থা ভালো থাকার কথা নয়। এখন বাংলাদেশে এক প্রকার দুরবস্থা চলছে। এর ফলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগের সুবিধাপ্রার্থীদের কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে দেখা যাচ্ছে না। যারা সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে ঘোরেন তাদেরও কিন্তু দেখা পাবেন না। আলোচনা বা টকশোর জন্য ডাকলে এখন তারা আসে না, ফোন করলে বলে ব্যস্ত আছেন।'

তিনি বলেন, 'হঠাৎ সরকার সিদ্ধান্ত নিল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করবে। তাহলে কী জামায়াতের অর্থনীতি নিষিদ্ধ হবে? জামাতের ৮১টি প্রতিষ্ঠান, যেগুলো দিনের পর দিন ব্যবসা করে আসছে, সেগুলো কী বন্ধ হবে?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে