বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সবাই আমরা একমত পতিত স্বৈরাচার-মাফিয়া সরকারের বেনিফিশিয়ারিদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়।
মঙ্গলবার রাজধানী ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে এই শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজন করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমান বলেন, 'নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পতিত পরাজিত শক্তি দেশে সাম্প্র্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করত। সারাদেশে হিন্দু সম্প্র্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কোনো একটি ঘটনার বিচার করেনি তারা।'
'গত ১৫ বছরে তাবেদার সরকারের সময় আমরা দেখেছি, সন্ত্রাসী দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ সময় ধর্মপ্রাণ মানুষদের
রাখা হয়েছিল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়।'
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, '৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানের পর স্বৈরশাসক পালানোর পর দেশের মুসলমান, হিন্দুসহ সব ধর্মের মানুষ এখন আয়না ঘরের ভীতিমুক্ত। আজ আমরা স্বাধীনভাবে এখানে একত্রিত হতে পেরেছি। তবে বিভিন্ন ধর্ম গোষ্ঠীর স্বার্থকে পুঁজি করে বা তাদেরকে ব্যবহার করে বা কোনো ধর্মকে ব্যবহার করে পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া দোসররা যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আপনাদের ও আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।'
ভবিষ্যতে যাতে সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম নিশ্চিন্তে উদযাপন করতে পারে তেমন একটি দেশ ও সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, 'ধর্ম যার যার, কিন্তু নিরাপত্তা পাওয়ায় অধিকার সবার।'
তারেক রহমান বলেন, 'মাফিয়া সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল শেষ করে চলমান সংস্কার কার্যক্রম শেষ করা বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে জনগণের প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাগব করা না গেলে জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়বে। ফলে এই সরকারের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এজেন্ডাভিত্তিক করা অত্যন্ত জরুরি।'
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পরাজিত অপশক্তি প্রশাসনে থাকা তাদের দোসররা নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে। এই কারণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও একটি বিষয় বিএনপিসহ সবাই আমরা একমত- মাফিয়া সরকারের বেনিফিশিয়ারদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য পৌঁছানো সহজ নয়।'
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, '৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর একটা যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারি নাই। এবার ৫ আগস্টের পর আবার একটা নতুন সম্ভাবনা এসেছে, আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি অসাম্প্র্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আসুন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি।'
পতিত শক্তি নানা ধরনের উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে, কোনোভাবে এই উস্কানির ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আসুন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করি।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'আমরা জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাসী, সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। ধর্ম যার যার, দেশটা আমাদের সবার। ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানের পর একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি ঐক্যবদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করি।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস বলেন, 'বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হিন্দুদের রক্ষার সেই বহমান প্রক্রিয়া এখনো চলছে। আগে হিন্দুদের পূজার সময় কোনো মন্দির পাহারা দিতে হতো না, এখন দেখি এসব! কেন? কোনো মুসলমান হিন্দুদের মন্দির ভাঙতে পারে না, কোনো ধর্মেই এমন নেই। এটি কে করছে? যত ধরা পড়ছে সব আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগ। আমার এলাকায় যত হিন্দুদের জমি দখল করেছে সব আওয়ামী লীগের নেতা।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর মঈন খান বলেন, 'মা আসেন প্রতিবছরের মতো সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। ৫ আগস্ট এদেশ থেকে অসুর পালিয়ে গেছে। সত্যের জয় হয়েছে।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'আমরা একটি রেইনবো জাতি গঠন করতে চাই, এটি বিএনপির দর্শন, চিন্তা থেকে এর প্রতিফলন। এটি নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিন্তার প্রতিফলনে কোনো সন্দেহ নেই। ধর্মকে মূলধন করে অনেকে নেতা হয়ে যান, তারা নিজেরা লাভবান হচ্ছেন, এমনকি যাদেরকে নিয়ে লাভবান হচ্ছেন তাদের নিয়ে কোনো ভাবনা নেই এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের মধ্যে।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, 'বিএনপিতে গোত্র ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমান। এটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দল।'
বিএনপিসহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু অপুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য অধ্যাপক ডক্টর সুব্রত বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, আফরোজা খানম রিতা, বিএনপি ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, বিএনপিসহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুশীল বড়ুয়া, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট উপদেষ্টা তপন দে, মহাসচিব তরুণ দে, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মিল্টন বৈদ্য গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবসহ বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিরা।