চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, 'আমি কোনো হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াব না। তবে যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন না, সিটি কর্পোরেশনকে সাবলম্বী করতে চাচ্ছেন না তাদের উদ্দেশে বলব, আপনারা দিয়ে দেবেন। আমি প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে ইতোমধ্যে বসেছি। রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে বসে আমি দেখেছি প্রচুর হোল্ডিং ট্যাক্স বাকি। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে অনেক আবেদন এসেছিল। সেগুলো মিটমাট না হওয়া পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স দেওয়া হয়নি।'
শনিবার রাতে নগরের গোল পাহাড় মোড়স্থ আমিরবাগ আবাসিক এলাকায় ডা. শাহাদাত হোসেন চসিক মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় আমিরবাগ আবাসিক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, 'আমি একটি সভা সোমবারে দিয়েছি। সব আবেদন আমি বাতিল করে আগের হোল্ডিং ট্যাক্সে ফিরে যাব। আপনার হোল্ডিং ট্যাক্স দিলেই আমি সিটি করপোরেশনকে সাবলম্বী করতে পারব। সততা, দেশপ্রেম ও নিষ্ঠা যদি থাকে তাহলে এটা অসম্ভব কিছু নয়। প্রথম দিন থেকেই আমি ৪৫০ কোটি টাকা দেনা নিয়ে শুরু করেছি। আমি সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে এ দেনা শূন্যতে নিয়ে আসব।'
চট্টগ্রামের মানুষকে ময়লামুক্ত শহর উপহার দেওয়ার কথা জানিয়ে মেয়র শাহাদাত বলেন, আমি চট্টগ্রামকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেখানে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি থাকবে না। একটি সুন্দর ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি আমি চট্টগ্রাম বাসীকে উপহার দিতে চাই। আমি ক্লিন মানে শুধু ময়লা পরিষ্কার করব তা নয়, মানুষের মনও পরিষ্কার করব। আমি বলেছি, আমার অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনে। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী যাতে এ সময় আমার অফিসে ভিড় না জমায়। এটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া আছে। আমার দলের নেতাকর্মী প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন আসেনি। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি রাজশাহী গিয়েছি। রাজশাহী পুরো শহর গ্রিন ও ক্লিন। কারণ তারা শিক্ষিত। তাদের বোঝালে তারা বোঝে। ময়লা ফেলতে বারণ করলে তারা ফেলে না। আমাদের চট্টগ্রামের মানুষ অতিথিপরায়ন। হৃদয় অনেক বড়। যদি তাদের বোঝাই তাহলে অবশ্যই তারাও বুঝবে। এজন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শুধু ডেঙ্গু জনসচেতনতা নয়, আমি গিয়ে অনুরোধ করব যাতে কেউ নালা-নর্দমায় ময়লা না ফেলে। বিশেষ করে পস্নাস্টিক, পলিথিন, ককশিট এসব জিনিস নালায় আটকে থাকে। আমি যতই নালা পরিষ্কার করি না কেন এবং জলাবদ্ধতার প্রকল্প নেই না কেন, জনগণকে যদি সচেতন করতে না পারি তাহলে এসব কিছু কিছু থেকে আমি পরিত্রাণ পাব না।'
সেবকরা কাজ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি মনে করি জনগণকে সচেতন করাই আমার প্রথম কাজ। এজন্য আমি বলেছি, সিটি করপোরেশনের এসি রুমে আমি বেশিক্ষণ বসব না। এলাকায় এলাকায় গিয়ে দেখব জনগণ সেবা পাচ্ছে কি না, নালা পরিষ্কার এবং মশক নিধন হচ্ছে কি না। মশক নিধনের যে ওষুধ ও স্প্রে আছে সেটা কার্যকর কি না আমি আগে পরীক্ষা করব। আগের কাউন্সিলররা প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ৫০ থেকে ৬০ জন লোক নিয়োগ দিয়ে রেখেছে, যারা বিভিন্ন কাজ দেখে। আপনাদের কাজ হবে ওসব নিয়োগ করা লোকেরা ঠিকভাবে কাজ করছে কি না সেটা আমাকে জানানো। যদি কেউ কাজে গাফিলতি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আমি কোনো ছাড় দেব না। আমি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাব। এ ছেলেগুলোর চেহারা দেখব। ৪১ ওয়ার্ডে ২ হাজারের অধিক পরিচ্ছন্নকর্মী আছে, যারা কাজ করার নামে টাকা নিচ্ছে। কাজ না করলে নতুন নিয়োগ দেব। অনেকেই চাকরির জন্য ঘোরাফেরা করছে। চাকরি নেই। কিন্তু চাকরি পেয়েও যারা জনগণের সেবা করছে না তাদের রাখা উচিত হবে না বলে আমি মনে করি।'
তিনি বলেন, 'আপনারা কোনো দুর্ভোগে পড়লে আমাকে জানাবেন। প্রতিটি ওয়ার্ড অফিসে আমি অভিযোগ বক্স দিয়ে দেব। ওয়ার্ড সচিবরাও যদি কোনো গাফিলতি করে তাদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব।'