মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
কৃষিতে আওয়ামী ভূত

৩০ প্রকল্প পরিচালকের মধ্যে অধিকাংশ ফ্যাসিস্টের দোসর

মন্তোষ চক্রবর্তী
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
৩০ প্রকল্প পরিচালকের মধ্যে অধিকাংশ ফ্যাসিস্টের দোসর

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৩০ প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ নিয়ে নানা অনিয়ম ও দলীয়করণের অভিযোগ রয়েছে। এসব পরিচালকের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী মতাদর্শের। তবে ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে সরকারের পতনের পর সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে রদ-বদল হলেও আওয়ামী সুবিধাভোগী এসব প্রকল্প পরিচালক এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের সহযোগিতা করছেন জুলাই-আগস্টে আ'লীগ সরকারের পক্ষে রাস্তায় মিছিলে অংশ নেওয়া অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী। যারা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাস্তায় নেমেছিলেন। তবে অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই তারা মিছিলে নামতে বাধ্য হয়েছিলেন। এসময় তিনি ঢাকার বাইরে ছিলেন বলেও দাবি করেছেন।

সূত্র বলছে, অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আবু মোহাম্মদ এনায়েত উলস্নাহ সাবেক কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। অধিদপ্তর থেকে পাঠানো প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় নিয়োগ দিলেও আবু মোহাম্মদ এনায়েতুলস্নাহর ক্ষেত্রে সেই বিধান মানা হয়নি। চাকরিবিধি অনুযায়ী, ২২ জানুয়ারি তার শেষ কর্মদিবস হলেও ২৩ জানুয়ারি তিনি দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন।

জানা যায়, এরই মধ্যে ওবায়দুর রহমান মন্ডল নামের একজনকে 'পরিচালক সরেজমিন উইং'-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনিও আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত। চাকরি জীবনের তিনি নিজের জেলা গাইবান্ধা জেলা উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। তিনি সর্বশেষ রংপুরে অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে তিনি সবসময় প্রাইজ পোস্টিং পেয়েছেন বলেও গুঞ্জন আছে। সরকার পতনের আগে ২৯ জুলাই তাকে অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) উইং হিসেবে পদায়ন করা হয়। কিন্তু আওয়ামী সংশ্লিষ্টতার কারণে ৫ আগস্টের পর সেই আদেশ বাতিল করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। 'সরেজমিন উইং'-এ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিধান থাকলেও তার ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।

অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) হাবিবুলস্নাহ শেখ কামাল এক সময় ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ছিলেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প তৈরিতে সহায়তাকারী দক্ষ কর্মকর্তাদের পরবর্তীে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বিগত সরকার এই নিয়ম না মেনে দলীয় আনুগত্য প্রকাশকারী কম যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদেরও এই পদে নিয়োগ দেয়।

সূত্র বলছে, মানসম্মত উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তুতকারী ডক্টর মাহফুজ হোসেন মিনদাহকে পাশ কাটিয়ে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর আস্থাভাজন এস এম কামরুজ্জামানকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একইভাবে আউয়ুবুর রহমানের প্রস্তুতকৃত প্রকল্পের পরিচালক করা হয় বেনজির আহমেদ কে; ড. সাইফুল ইসলামের তৈরিকৃত টিসু্য কালচার প্রজেক্টে পরিচালক করা হয় তালহা জুবায়ের মাশরুরকে। একইভাবে আ'লীগ সমর্থিত কৃষিবিদ নেতারা বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক পদ বাগিয়ে নেন।

অভিযোগ আছে, এই অধিদপ্তরের কতিপয় প্রকল্প পরিচালকের অর্থায়নে শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা জানিয়ে শান্তি মিছিলে অংশ নেন এই অধিদপ্তরের নানা স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। সরকার পতনের পর আওয়ামী সুবিধাভোগিরা অপসারিত হবেন এমনটি প্রত্যাশা ছিল কৃষিবিদদের, কিন্তু সরকারের পতনের ৬ ছয় মাসের পরও তারা দায়িত্বে বহাল রয়েছেন। এ সময়ে কয়েকটি প্রকল্পের পরিচালক পরিবর্তন করা হলেও বেশিরভাগ পরিচালক পদে রয়েছেন ফ্যাসিস্টের দোসর।

সম্প্রতি প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল এন্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ইন নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনারশিপ এন্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) পার্টনার প্রকল্পের পরিচালক পরিবর্তন করে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী সরকারের সময় দুই জেলার দায়িত্ব পালন করা আবুল কালাম আজাদকে। তিনি প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ পাওয়ার পর খামারবাড়িতে বহিরাগত লোকজন নিয়ে মহড়ার মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন- এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ক্লিপ 'যায়যায়দিনের' হাতে এসেছে। যদিও এবিষয়ে বর্তমান পার্টনার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি বহিরাগত লোকজন নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। যারা ছিলেন সবাই তার শুভাকাঙ্ক্ষী।

এ বিষয়ে কৃষি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল ইসলাম বলেন, 'প্রকল্প পরিচালক ইতিমধ্যে অনেকই বদলি হয়েছেন এবং বদল হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে