সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

স্বচ্ছতা ও উন্নয়নে অনন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

জাহাঙ্গীর আলম
  ০৪ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
স্বচ্ছতা ও উন্নয়নে অনন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
স্বচ্ছতা ও উন্নয়নে অনন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

চব্বিশের গণ-অভু্যত্থান পরবর্তী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার যেন বৈষম?্যহীনতা ও মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত এই কারাগারে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধে?্য ইস্পাত কঠিন শৃঙ্খলা ও বন্দীদের উন্নত জীবনমান নিশ্চিতে কাজ করায় বন্দি ও স্বজনদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। জুলাই আন্দোলনের পরে সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার কারাগারের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন। কারাগারকে মানবিক পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

কারাগারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেন তারা। কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশনায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে কারাগারের পরিবেশকে সবুজ ও স্বাস্থ্যসম্মত করে গড়ে তুলেছেন। বন্দীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য উন্মুক্ত স্থানে বাগান তৈরি করা হচ্ছে, যা কারাগারের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করবে না, বরং বন্দীদের মানসিক প্রশান্তির একটি উৎস হিসেবে কাজ করবে।

কারাগারে শুধু বন্দীদের আটকে রাখা নয়, বরং তাদের দক্ষতা বাড়িয়ে সমাজে পুনর্বাসন করতে নানা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ:বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি, তাঁত শিল্প, মৃৎশিল্প, অ?্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, জামদানি শাড়ি তৈরি, কাঠের কারুকাজ ও দর্জি কাজ। তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ: আগ্রহী বন্দীদের কম্পিউটার ও ডিজিটাল দক্ষতা শেখানো হয়, যাতে তারা মুক্তির পর ভালো চাকরির সুযোগ পান। কারাভ?্যন্তরে ক্ষুদ্র উদ্যোগ:বন্দীরা নিজেদের তৈরি পণ্য কারাগারের কেন্টিনে পিসির মাধ্যমে বিক্রি করার সুযোগ পান, যা তাদের আয় করার সুযোগ করে দেয়। এভাবে কারাগার থেকে মুক্তির পর তারা সমাজে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সক্ষম হবে।

কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের খাদ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার ও জেলার একেএম মাসুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বন্দীদের সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতে নিয়মিত মেনু পর্যালোচনা করা হয়। প্রতিদিনের খাদ্যে সরকার অনুমোদিত তাজা সবজি ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করা হয়।

কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা, বডিস্ক্যানার,

লাগেজস্ক?্যানার, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর সক্রিয় রাখাসহ নতুন নতুন নিরাপত্তা প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে, যাতে অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা যায়। কারাগারে মাদকের প্রবেশ বন্ধ করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারাগারের কারারক্ষী ও কারা সদস্যদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে তারা আরও দক্ষ হয়ে ওঠেন। ফলে কারাগারের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার মান উলেস্নখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীরা এখন আগের তুলনায় ভালো খাবার, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বজনদের সঙ্গে স্বস্তির সাথে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন।

সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, 'আমি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলাম। যখন প্রথম এখানে আসি, তখন খাবার নিয়ে কিছু অভিযোগ ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে খাবারের মান অনেক উন্নত হয়েছে। প্রতিদিনের খাবারে বন্দিরা পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি, ডাল, মাছ বা মাংস পাচ্ছেন। খাবারের স্বাদ আগের তুলনায় অনেক ভালো এবং স্বাস্থ্যকর হয়েছে। কারাগারের জেলার স্যার ও জেল সুপার স্যার নিয়মিত সাপ্তাহিক ফাইলে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে ভালো কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।'

কারাগারে বন্দী সুমনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, 'সবচেয়ে বড় স্বস্তির বিষয় হচ্ছে আমরা যখন সুমনের সাথে কারাগারের নির্ধারিত সময়ে সাক্ষাৎ করতে আসি তখন কোনো ধরনের হয়রানি বা অতিরিক্ত হয়নি। আগের তুলনায় এখন প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ এবং স্বচ্ছ।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারারক্ষী বলেন, 'জেল সুপার স্যার ও জেলার স্যারের সার্বিক দিকনির্দেশনায় কারাগারের যাবতীয় কার্যক্রম খুব সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সবার প্রতি সমতা ও ন্যায্যতা বজায় রেখে স্যারেরা সবকিছু পরিচালনা করেন।'

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ জানান, 'আমি নিয়মিত কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করি। কারাগারের বন্দিদের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ মানবিকভাবে কাজ করছেন। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই।'

ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স মো. জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, 'আপনারা জানেন আমাদের মিশন হচ্ছে "রাখিব নিরাপদ দেখাবো আলোর পথ'। ছাত্রজনতার গণঅভু্যত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে আমাদের এই মিশনকে শতভাগ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সমালোচনা আছে, থাকবে। কিন্তু সেজন্য মনোবল না হারিয়ে বন্দি ও স্টাফ কল?্যাণে সততার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার জন্য আমি এবং আইজি প্রিজন্স স?্যার সবসময়ই কারা কর্তৃপক্ষকে উৎসাহ দিয়ে আসছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে