শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় দলের বিবেচনায় আছেন সৌম্য

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
সৌম্য সরকার

চলমান ডিপিএলে গতকাল মঙ্গলবার ফতুলস্নার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ব্রাদার্স ইউনিয়নের পেসার মোহর শেখের বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে মোহামেডানের সৌম্য সরকার মাত্র ৯ রানে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সৌম্যর আসা-যাওয়ার এমন দৃশ্য নিয়মিত ঘটনা। চরম অফফর্মে থাকা সৌম্য বিপিএলের পর ঢাকা লিগেও নিজের ছায়া হয়ে আছেন।

এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের হয়ে খেলছেন সৌম্য। এখন পর্যন্ত ৯টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সেখানে ২০.১৩ গড়ে করেছেন মাত্র ১৬১ রান। সর্বোচ্চ ৫৬। আরেক ম্যাচে করেন ৪১ রান। বাকি সব ম্যাচে আউট হয়েছেন বিশের আগেই। সব মিলিয়ে আরও একটি বাজে মৌসুমই কাটছে তার। অথচ দুই মৌসুম আগে এই প্রিমিয়ার লিগেই দেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। সেখানে এবার রানের দেখাই পাচ্ছেন না এ ব্যাটার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌম্যের শুরুটা ছিল রাজার মতো। ঘরের মাটিতে ২০১৬ সালে পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিন সিরিজে ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করেছিলেন তিনি। তবে এরপর যতই সময় গড়িয়েছে ততই আঁধারে ডুবেছেন এই ওপেনার। যেন তার ব্যাটে ঘুণে ধরেছে! ফলস্বরূপ বাদ পড়েছেন জাতীয় দল থেকেও।

অথচ নজর কাড়া পারফরম্যান্সেই বাংলাদেশ জাতীয় দলে এসেছিলেন সৌম্য সরকার। একের পর এক ম্যাচে জেতানো পারফরম্যান্সে নিজেকে তৈরি করেছিলেন জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে। কিন্তু সে সবই এখন অতীত। নিজেকে হারিয়ে খুঁজে চলেছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু পাচ্ছেন না চেনা ছন্দের দেখা। তার এমন পরিস্থিতিতে হতাশ জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার। তবে এখনও সৌম্যকে জাতীয় দলের বিবেচনায় রাখছেন বলে জানালেন এ নির্বাচক।

এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) চার ম্যাচে করেন মাত্র ১৩৮ রান। মাঝে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিসিবি একাদশের প্রস্তুতি ম্যাচে সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে ৪৮ রান। বিপিএলেও হাসেনি তার ব্যাট। ১২ ম্যাচ খেলে করেন কেবল ১৭৪ রান।

সবশেষ টি২০ বিশ্বকাপে জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছিলেন সৌম্য। অস্ট্রেলিয়ায় সেই বিশ্বকাপে চার ম্যাচে মাত্র ৪৯ রান করে দল থেকে বাদ পড়েন। গত বছর ৬টি টি২০তে তার বিবর্ণ সময় চলছিল। এ সময়ে রান করেছিলেন মাত্র ৭৬। এর আগের বছর ১৬ টি২০ খেলা সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে ১৫.৬৮ গড়ে ২৫১ রান।

নিয়মিত খেলার মধ্যেই আছেন। পারফর্ম না করেও সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে। তবে সেটি কাজে লাগাতে পারেননি। পোক্ত করতে পারেননি নিজের জায়গা।

গতকাল মোহামেডানের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশার। সৌম্যর ব্যাটে রানখরা নিয়ে ম্যাচকালীন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বাশার। তার কণ্ঠে বিরক্ত, আক্ষেপের সুর পাওয়া গেল।

সৌম্যর এমন বর্ণহীন পারফরম্যান্সের হতাশ হাবিবুল, 'সৌম্যর কাছে যে প্রত্যাশা সে অনুযায়ী পাচ্ছি না। কিছু দিন আগেও জাতীয় দলে ছিল। বাংলাদেশের পক্ষে তার অনেক ভালো পারফরম্যান্স আছে। ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স। এখন প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স পাচ্ছি না। ও এখনও আমাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করলে আমাদের পুল আরও বড় হয়। আমরা বিশ্বাস করি, ওর সামর্থ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একটু হতাশ তো অবশ্যই।'

ভীষণ প্রতিভাধর খেলোয়াড় হওয়ায় নির্বাচকদের অনেক সমর্থনই পেয়েছেন সৌম্য। কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। এখন নিজের এই বাজে পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার উপায় সৌম্যকেই বের করতে হবে বলে মনে করেন হাবিবুল, 'ওর সাথে সবাই কথা বলছে। যে মানসিক সমর্থন দরকার সেটা সবসময় দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে ক্রিকেটারদের নিজেকেই নিজে বাঁচাতে হয়। ও কিন্তু অনেক দিন ধরে খেলছে, মোটেও নতুন ক্রিকেটার না। যথেষ্ট অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। মানসিক সমর্থন তো সবসময় পায়। নিজেকেই ঠিক করতে হবে, কীভাবে খেলতে হবে সেটা নিজেকেই বের করতে হবে।'

'সব ব্যাটারের একটা ব্যাটিং পস্ন্যান থাকে, একটা নিজস্ব পস্ন্যান নিয়ে মাঠে নামে। সেটা হতে পারে কোন বোলারকে মারবে, কোন বোলারকে মারবে না, কোন দিক ছোট, কোন দিকে বাতাস আছে। এমন সব ব্যাটারেরই কিছু বেসিক পস্ন্যান থাকে। সৌম্যকে নিজের ব্যাটিং পস্ন্যান ঠিক করতে হবে, কীভাবে ও ব্যাটিং করতে চায়। নিজের ব্যাটিং বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ। ওকে বোঝানোর কিন্তু কিছু নেই। ওর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সাফল্য আছে। বড় বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংস আছে। ওকে কিছু বোঝানোর নেই। ওকে নিজেই বুঝতে হবে,' যোগ করেন এ নির্বাচক।

বর্তমান বাংলাদেশ টি২০ দলে একজন ধারাবাহিক ওপেনার রীতিমতো সোনার হরিণ। যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ওপেনিং সমস্যা সমাধানে টিম-ম্যানেজমেন্টের যেন ঘুম হারাম। একটা পরিসংখ্যান দলের এই দৃশ্যটা আরও পরিষ্কার করবে। গত টি২০ বিশ্বকাপের পর থেকে ইংল্যান্ড সিরিজের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ যতটা টি২০ ম্যাচ জিতেছে, এই সময়ে তার থেকে বেশি ব্যাটার দেশের হয়ে ওপেন করেছেন। অথচ ধারাবাহিক হতে পারেননি কেউই। যেখানে সৌম্যের মতো একজন হার্ডহিটার ওপেনার হতে পারতেন উপযুক্ত সমাধান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে