রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দল নির্বাচনে পরীক্ষায় পড়তে হবে নির্বাচকদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৯ মে ২০২৩, ০০:০০

ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাকি আর মাত্র পাঁচ মাস। ভারতে অনুষ্ঠেয় এ আসরকে ঘিরে তোড়জোড় শুরু হয়েছে এখন থেকেই। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টকে ঘিরে সব দলের মধ্যেই থাকে আলাদা উন্মাদনা। সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের প্রমাণ করার চেষ্টাটাও থাকে সর্বাত্মক। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এবার এই চেষ্টা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। কারণটা খুব রহস্যজনক কিছু না। একদিকে শক্তির ফরম্যাট, অন্যদিকে চেনা কন্ডিশন। বিশ্বকাপের এ আসরে তাই বাংলাদেশকে ফেভারিটের তালিকায় রাখলেও খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্বকাপের এ আসরটা মূলত আরও একটি কারণে বিশেষ। ধারণা করা হচ্ছে, পঞ্চপান্ডবের চার তারকা- তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদের এটাই শেষ বিশ্বকাপ। আর ঘরের মাঠে টাইগারদের সাম্প্র্রতিক ফর্ম তো নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া।

যেহেতু এশিয়ান কন্ডিশনে টাইগারদের ফর্ম বরাবরই ভালো, তাই বিশ্বজয়ের সম্ভাবনাটা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো না। তবে সেক্ষেত্রে সাকিব-তামিমদের প্রস্তুত হতে হবে নিখুঁতভাবে। আর এ প্রস্তুতির বড় একটা অংশজুড়ে আছে পরিকল্পনা।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দল সাজানো নিয়ে বড়সড় পরীক্ষাতেই পড়তে হবে নির্বাচকদের। নতুন ব্যাটারদের মধ্যে ফিনিশিং লাইনে তাওহীদ হৃদয়ের দুর্দান্ত ফর্ম প্রশ্নের মুখে ফেলেছে মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ এবং ইয়াসির আলী রাব্বির জায়গা পাওয়ার বিষয়টিকে। বোলিংয়ে মুস্তাফিজ অফফর্মে থাকলেও ইংল্যান্ডের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে বাজিমাত করেছেন। ভালো সময় পার করছেন হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ এবং এবাদত হোসেন। শরিফুলের সাম্প্র্রতিক ফর্ম খুব একটা আশাব্যঞ্জক না হলেও নির্বাচকদের ভাবনায় আছেন তিনিও। আর এদিকে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে মৃতু্যঞ্জয়েরও সুযোগ থাকছে নিজেকে মেলে ধরার।

অনেক পজিশন নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। তবে সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না ওপেনিংয়ের বিষয়টি। বিষয়টা অনেকটা এমন যে, ওপেনিং জুটির দুই খেলোয়াড়ই যেন বেশ নিখুঁত। নইলে বিশ্বকাপের আগে প্রায় সব পজিশনেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেও, ওপেনিং নিয়ে কোনো ভাবনা নেই নির্বাচক কিংবা কোচের। আর সেটা হয়তো সম্ভবও না। কারণ সমস্যাটা তো পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় অংশ অধিনায়ক তামিম ইকবালকে নিয়ে।

গত কয়েক বছর ধরেই স্স্নো ক্রিকেট খেলার জন্য দারুণভাবে সমালোচিত তামিম। কিন্তু গত বছর থেকে শুধু তামিমের স্ট্রাইক রেটই নয়, তামিমের সামগ্রিক ব্যাটিংই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ম্যাচেই ওপেনিংয়ে দলকে ভালো শুরু এনে দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন অভিজ্ঞ এ ওপেনার। অনেক সময় তার স্স্নো ব্যাটিং উইকেটের অন্য প্রান্তে থাকা লিটন দাসের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, যা বাধ্য করছে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলে নিজের উইকেট হারাতে।

বিশ্বকাপের বছর তামিমের বাজে ফর্ম এরই মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠেছে। ঘরের মাঠে সাম্প্রতিক ইংল্যান্ড সিরিজে বলার মতো কোনো পারফর্ম করতে পারেননি তিনি।

আইরিশদের বিপক্ষে যেখানে রান বন্যা বইয়ে দিয়েছেন ব্যাটাররা, সেখানেও তামিম ধুঁকেছেন বাজেভাবে। শুধু তাই নয়, ঘরোয়া লিগ ডিপিএলেও তামিমের ব্যাটিং আশানুরূপ ছিল না।

নিজের প্রথম বিশ্বকাপের পর বিশ্ব আসরে কখনোই নিজেকে তেমন একটা প্রমাণ করতে পারেননি তামিম। দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার হলেও বিশ্বকাপের মতো জায়গায় তার পারফরম্যান্স গড়পড়তার চেয়েও খারাপ। ওয়ানডে বিশ্বকাপে এ বাঁহাতি ব্যাটারের গড় মাত্র ২৪।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজের সবশেষ ম্যাচে ৮২ বলে ৬৯ রান করেছেন তামিম। এ ম্যাচের আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক সবশেষ ফিফটি করেছিলেন ৯ ম্যাচ আগে। সেই দশ ইনিংসে অধিনায়কের মোট রান ১৫৭। প্রায় প্রতি ম্যাচেই তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০-এর কম। মজার ব্যাপার হলো, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে রান বন্যার সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটারের মোট রান ৬৭।

ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলেছেন তামিম। সেখানে সেঞ্চুরি পেলেও, ৭০-এর নিচে স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি, যা বতর্মান ক্রিকেটে বড্ড বেমানান।

এবার চোখ রাখা যাক তামিম ইকবালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে। এখন পর্যন্ত খেলেছেন ২৯ ম্যাচ; তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭১৮ রান। গড় মাত্র ২৪। আর গেল বিশ্বকাপে আট ম্যাচে ৩০ গড়ে করেছেন ২৩৫ রান।

বিশ্বকাপের পাঁচ মাস বাকি থাকতে তামিমের এমন অফফর্মের পরেও তার জায়গায় কাউকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হচ্ছে না। নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে প্রতিনিয়তই দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। গেল ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অফফর্মের কারণে মাশরাফি বিন মর্তুজার খেলা নিয়ে ওঠেছিল নানা প্রশ্ন। সেই বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্সের পরও সুফল পায়নি দল। এবারও তার পুনরাবৃত্তি হলে, ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে স্বপ্ন দেখছে, তা হয়তো অধরাই থেকে যাবে!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে