সারাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর-জি সেবা বন্ধ থাকার কারণে মুঠোফোনে আর্থিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) দেয় যেসব কোম্পানি, তাদের সূত্রে জানা গেছে যে মোবাইলে ইন্টারনেট না থাকার কারণে অনেক গ্রাহক তাদের অ্যাপ ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করতে পারছেন না। গত বুধবার রাত থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর-জি সেবা বন্ধ রয়েছে। তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু আছে। পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেটের টু-জি সেবা চালু আছে বলে জানা গেছে। তবে তুলনামূলক উচ্চ গতির ফোর-জি সেবা চালু না থাকার কারণে যারা মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল তারা বিপাকে রয়েছেন। বিকাশ-নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে তারা দেখতে পেয়েছেন, অ্যাপ ব্যবহার করে অর্থের লেনদেন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কমে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই গ্রাহকরা তাদের সেবা পেতে বেশি সমস্যায় রয়েছেন। মোবাইল ফোনে সবচেয়ে বড় আর্থিক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। এটির গ্রাহকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং তাদের সেবা ব্যবহার করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থও লেনদেন করা হয়। বিকাশের সূত্রগুলো জানাচ্ছে, এই পস্ন্যাটফর্মে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ অর্থ এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন হয় তার প্রায় ৫০ শতাংশ হয় বিকাশে। বিকাশের একজন কর্মকর্তা জানান, বেলা ১১টা নাগাদ তাদের লেনদেন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশের মতো কমেছে। অন্যদিকে আরেক বড় প্রতিষ্ঠান নগদের লেনদেন সকাল নাগাদ ৫ থেকে ৭ শতাংশ কম ছিল বলে জানা গেছে। দিন শেষে লেনদেন কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে ব্যাপারে একটি চিত্র পাওয়া যায় বলে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান। এমএফএস সেবা পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ার একটি কারণ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু থাকা। অফিস ও বাসাবাড়িতে অনেকেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারছেন। নগদের হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইন্টারনেট বিঘ্নিত হলে এমএফএস গ্রাহকরা কিছু মাত্রায় অসুবিধায় পড়েন, বিশেষত যারা অ্যাপে লেনদেন করেন। কিন্তু ওয়াইফাইয়ের আওতায় থাকলে অ্যাপের সেবা চালু থাকছে, ফলে অ্যাপ ব্যবহারকারী গ্রাহকরা তেমন অসুবিধা অনুভব করেন না। জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, আবার এখনো যেহেতু ইন্টারনেটবিহীন বাটন ফোন ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা অনেক বেশি, ফলে অর্থ লেনদেন করতে তারা খুব বেশে সমস্যায় পড়েন না। এ ছাড়া যারা অ্যাপে লেনদেন করেন তারাও ইন্টারনেট সংযোগবিহীন থাকলে ইউএসএসডি সেবার মাধ্যমে বাটন চেপে সব লেনদেনের সুবিধা পেতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিকাশের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব গ্রাহক এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের মধ্যে আছেন সেই গ্রাহকরাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন। তবে তারা ইউএসএসডি সেবা ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করতে পারেন। ইউএসএসডি হলো আনস্ট্রাকচারড সাপিস্নমেন্টারি সার্ভিস ডেটা। মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কের সঙ্গে গ্রাহককে যুক্ত করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের চেয়ে এমএফএস ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক হিসাবের তুলনায় এমএফএস বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সহজেই বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও লেনদেনের সুবিধার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এমএফএসই এখন আর্থিক লেনদেনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ফেব্রম্নয়ারিতে দেশে এমএফএস সেবার মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।