সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
বস্নম্নম ভেঞ্চার্সের প্রতিবেদন

শত কোটি ভারতীয়র হাতে খরচের টাকা নেই

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৪ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শত কোটি ভারতীয়র হাতে খরচের টাকা নেই

বস্নম্নম ভেঞ্চার্সেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ভোক্তা শ্রেণি সংখ্যায় বাড়ছে না, বরং যারা ধনী তারা আরো ধনী হচ্ছেন। ফলে বাজারের ধরন বদলে যাচ্ছে। সংস্থাগুলোও এখন সাধারণ জনগণের জন্য সাশ্রয়ী পণ্যের চেয়ে বিলাসবহুল ও উচ্চমানের পণ্য তৈরি করেই বেশি লাভ করছে। ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। এর মধ্যে প্রায় একশ কোটি মানুষের হাতে খরচ করার জন্য কোনো বাড়তি টাকা নেই। এমনটাই জানিয়েছে নতুন এক প্রতিবেদন। খবর বিবিসি।

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থা বস্নম্নম ভেঞ্চার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে প্রকৃত ভোক্তা শ্রেণির সংখ্যা মাত্র ১৩-১৪ কোটি, যা প্রায় মেক্সিকোর জনসংখ্যার সমান। আরো ৩০ কোটি মানুষকে 'উদীয়মান' ক্রেতা বলা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। তবে তারা খুবই সংযতভাবে খরচ করেন এবং ধীরে ধীরে ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে খরচের দিকে ঝুঁকছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ভোক্তা শ্রেণি সংখ্যায় বাড়ছে না, বরং যারা ধনী তারা আরো ধনী হচ্ছেন। ফলে বাজারের ধরন বদলে যাচ্ছে। সংস্থাগুলোও এখন সাধারণ জনগণের জন্য সাশ্রয়ী পণ্যের চেয়ে বিলাসবহুল ও উচ্চমানের পণ্য তৈরি করেই বেশি লাভ করছে।

এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে অভিজাত ও বিলাসবহুল আবাসনের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং দামি স্মার্টফোনের বিক্রি বাড়ার মধ্যে। অন্যদিকে, সস্তা ফোন ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের চাহিদা কমছে। এখন ভারতের মোট আবাসন বাজারের মাত্র ১৮ শতাংশ হচ্ছে সাশ্রয়ী বাড়িঘর, যা পাঁচ বছর আগেও ৪০ শতাংশ ছিল। ব্র্যান্ডেড পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এমন বিনোদনমূলক অভিজ্ঞতা, যার বেশ ব্যয়বহুল। কোল্ডপেস্ন বা এড শিরানের মতো আন্তর্জাতিক তারকাদের কনসার্টের উচ্চমূল্যের টিকিট হটকেকের মতো বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক সাজিথ পাই বিবিসিকে জানিয়েছেন, যেসব ব্যবসা এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে তারা লাভবান হয়েছেন। কিন্তু যাদের ব্যবসা মূলত সাধারণ মানুষের চাহিদা নিরূপণের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল, তারা বাজার হারাচ্ছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির পর ভারতের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ধরন এমন ছিল যে, ধনীরা আরো ধনী হয়েছে। অন্যদিকে, গরিবরা আরো দুর্বল অবস্থায় পড়েছে। অবশ্য, এটি নতুন কিছু নয়। গত কয়েক দশক ধরেই ভারতে আয় বৈষম্য বাড়ছে। ১৯৯০ সালে শীর্ষ ১০ শতাংশ ভারতীয়র হাতে ছিল জাতীয় আয়ের ৩৪ শতাংশ, যা এখন ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, নিম্ন আয়ের ৫০ শতাংশ মানুষের আয় জাতীয় আয়ের ২২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ১৫ শতাংশে নেমেছে। বর্তমানে খরচের এই মন্দার পেছনে দুটি বড় কারণ কাজ করছ্তেএকদিকে মানুষের হাতে খরচ করার টাকা নেই, অন্যদিকে ঋণের বোঝা বাড়ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সহজ ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, যা মহামারির পর ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হয়েছিল।

অল্প সময়ের জন্য দুটি বিষয় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পর্াতেএকটি হলো গ্রামাঞ্চলে ভালো ফসলের কারণে চাহিদা বাড়া, আর অন্যটি সরকারের বাজেটে ঘোষিত ১২০০ কোটি ডলারের কর ছাড়। এতে ভারতের জিডিপি দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।

মার্সেলাস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার্সের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এতদিন অর্থনীতির চালিকা শক্তি ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। আর সে শ্রেণিই এখন সংকুচিত হচ্ছে। গত এক দশকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয় প্রকৃত অর্থে স্থির থেকেছে, যা মূল্যস্ফীতি হিসাব করলে কমে যাওয়ার সমান।

এছাড়া, নগর এলাকায় হোয়াইট কলার জব বা অফিসের চাকরির সংখ্যা কমছে। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিভিন্ন অফিসের নিয়মিত কাজগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করে ফেলছে। বিশেষ করে উৎপাদন খাতে তদারকি বা সুপারভাইজরি পদ কমে গেছে। সরকারের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সমীক্ষাতেও এই উদ্বেগের কথা উলেস্নখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে পরিষেবাভিত্তিক অর্থনীতি বিদ্যমান থাকায় প্রযুক্তির কারণে কর্মসংস্থান কমে গেলে খরচও কমে যাবে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। যদি এই সংকট আরো তীব্র হয়, তাহলে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে