সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শমসের গাজীর রহস্যময় সুড়ঙ্গ, এক পাশে বাংলাদেশ অন্যপাশে ভারত 

আজাদ মালদার, ফেনী প্রতিনিধি
  ১১ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৯
আপডেট  : ১১ জুলাই ২০২৩, ১১:৫০

কালের আখ্যান হয়ে এখোনো অখ্যাত বাংলার বীর শমশের গাজীর সুড়ঙ্গ। অবিভক্ত বাংলায় তৈরী হওয়া এ সুড়ঙ্গের এখন এক মুখ বাংলাদেশ অন্য মুখ ভারতে। সুড়ঙ্গ ও শমশের গাজীর ভিটা নিয়ে রয়েছে আরো অনেক উপাখ্যান।

ফেনীর শমসের গাজীর সুড়ঙ্গপথ সম্পর্কে কমবেশি অনেকের জানা। ছাগলনাইয়ার চম্পকনগরে ভারতের সীমান্ত এলাকাটি মূলত শমসের গাজীর স্মৃতি বিজড়িত স্থান। সেখানে আছে শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ, শমসের গাজী বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট, দীঘিসহ অনেক কিছু। তবে তার প্রাসাদসহ অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ ভারতের ত্রিপুরার মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে।

ফেনীর ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এ স্থানটি অন্যতম। সেখানে গেলে পর্যটকরা শমসের গাজীর সুড়ঙ্গপথে ঢুঁ না মেরে কখনো ফেরেন না। সুড়ঙ্গপথ পানে তাকালেই রহস্যময় এক অনুভূতির সৃষ্টি হয় সবার মাঝে, জাগে কৌতূহল। কেন জমিদার শমসের গাজী এ সুড়ঙ্গপথটি তৈরি করেছিলেন। শমসের গাজী কৃষক-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জন করেন জমিদারি।

সে সময় তিনি চোর ডাকাত ও জলদস্যুদের রুখতে এক শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তোলেন। বর্তমান ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম পীর মুহাম্মদ মতান্তরে পেয়ার মুহাম্মদ খান এবং মাতার নাম কৈয়্যারা বিবি।

তারপর নিজের জ্ঞান, শক্তি, দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনিও একসময় হয়ে ওঠেন জমিদার। টানা এক যুগ ত্রিপুরা রাজ্য শাসন করেন এই বীর। ভাটির বাঘ বলে পরিচিতি লাভ করেন। বহু যুদ্ধক্ষেত্র দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন বীর শমসের। শত্রু সেনা বিনাশ করতে কখনো পিছপা হননি। তার কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ইংরেজ বেনিয়ারা। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ঐপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসন প্রতিহত করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

শমসের গাজী নবাব সিরাজুদ্দৌলার পর তিনিই ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে প্রথম নিহত হন। বহু কৃতিত্ব রয়েছে তার। মৃত্যুর আগে তিনি দুর্গ ও রাজধানী গড়েন। প্রতিরক্ষার জন্য আধুনিক রণকৌশলে সাজান পুরো এলাকাতে । ফেনীর ছাগলনাইয়ার চম্পকনগর ও জগন্নাথ সোনাপুরের বর্তমান ভারত সীমান্ত এলাকাটি শমসের গাজীর স্মৃতি বিজড়িত স্থান। এখানেই রয়েছে শমসের গাজীর সুড়ঙ্গপথ ও শমসের গাজীর দীঘি। তিনি তার রাজকীয় বাড়ির পাশে ৪.৩৬ একর জায়গা জুড়ে দীঘি এবং একটি সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ করেন।

গাজীর সুড়ঙ্গ পথটি নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প ও উপাখ্যান। ইতিহাসের এই আশ্রমটি দেখতে প্রতিনিয়তই এখানে ভীড় করেন পর্যটকরা।

সুড়ঙ্গের অদূরেই রয়েছে শমশের গাজীর একটি দিঘী। যাকে এক খুইল্লাও বলা হয়। এদিঘীটিকে নিয়েও রয়েছে নানা গল্প। দেখতে ছোট হলেও এ দিঘীটি এখনও কেউ ডিল ছুড়ে পার করতে পারেননি। স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, এতে অলৌকিক শক্তি আছে। যে শক্তির কারণে ডিল ছুড়ে পার করা যায় না।

বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার লোকজন ঘুরতে ও দেখতে আসেন শসসের গাজীর সুড়ঙ্গ ও দিঘিেকে।

তারা বলেন, শমসের গাজীর দিঘী ও সুড়ঙ্গ এলাকাটি এখন ব্যক্তিগতভাবে বাগানে পরিণত হছে। তাদেরকে দশটাকা ফি দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।তারা এখানে ঘুরতে আসেন। এখানে দায়িত্বে থাকা প্রবীণ ব্যক্তি জানান, তিনি শুনেছেন এখনও শমশের গাজীর দিঘীর নিচে গাজীর আস্ত্রাগার ও ধন-সম্পদ রয়েছে। সেই অজানা জগত এখনও কেউ আবিষ্কার করতে পারেননি। এনিয়ে দুদেশের প্রশাসনিক পর্যায়ে মিটিং ও হয়েছে বিশ বছর আগে। রাস্তা মেরামতের দাবি জানান দর্শনার্থীরা। যেহেতু সীমান্ত এলাকায়, নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে তারা শংকিত। দুদেশের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে একটি চুক্তিতে দর্শনীয় স্থানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ- উল হাসান বলেন, এ জায়গাটি ফেনীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। এটি এখন জেলার অন্যতম পর্যটন স্পটও। দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে এই স্পটের। দর্শনার্থীদের নিকট আকর্ষণীয় করতে এখানে আরো বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।

নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে উচ্চ মহলে জানাবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক

আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান।

সর্বশেষ সমশের গাজীর বীরর্ত্রের প্রতি সম্মান রেখে, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষন করার জন্য সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ একান্ত দরকার।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে