সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুবাইকে হারিয়ে বিত্তশালীদের ‘নতুন ঠিকানা’ রাস আল খাইমা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩০

এবার বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশের তালিকায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতের নাম ৬ নাম্বারে উঠে এসেছে। তার আগে কাতার। সৌদি আরবের নাম নেই শীর্ষ দশে। এতে বুঝা যাচ্ছে আরব আমিরাতে ব্যবসা ও বিদেশীদের আগমন বেড়েছে। আমিরাতের বিভিন্ন শহর নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন কোনো কতটা আধুনিক কিংবা বিলাসবহুল হিসেবে গড়ে তুলতে। তবে এই মধ্যে দুবাই তার শীর্ষস্থান হারাতে বসেছে। কারণ অন্য একটি শহর এই তালিকায় সংযুক্ত হচ্ছে শিগগিরই।

এদিকে বিশ্বের নামীদামি হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, ঝাঁ চকচকে রাস্তা- কী নেই আরব সাগরের তীরে অবস্থিত দুবাই শহরে। এটিই আরবের সব থেকে বড় এবং জনবহুল শহর। বিত্তশালীদের শহরও বটে। দুবাইয়েই রয়েছে বিশ্বের উচ্চতম ইমারত বুর্জ খলিফা, যার উচ্চতা ৮২৮ মিটার।

দুবাইকে কোটিপতিদের সব থেকে পছন্দের জায়গা বলে মনে করা হয়। তবে খুব শিগগিরই ‘বিত্তশালীদের শহর’ উপাধি হারাতে চলেছে শহরটি। কারণ মাথা তুলছে ‘রাস আল খাইমা’।

‘রাস আল খাইমা’ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সপ্তম এবং সব থেকে ছোট আমিরাত।

মনে করা হচ্ছে রাস আল খাইমাই হতে চলেছে আরবের শেখ ও বিত্তশালীদের পরের ‘ঠিকানা’। যা নিয়ে ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।

পারস্য উপসাগরের পশ্চিম প্রান্তে থাকা রাস আল খাইমায় ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ইমারত তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের একটি সংস্থা ৩৯০ কোটি ডলার দিয়ে একটি বিশাল প্রকল্প চালু করেছে এই আমিরাত।

রাস আল খাইমা এক সময় বড় বড় পাহাড় ও সিরামিক সংস্থার জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন তা ধীরে ধীরে উচ্চ বিত্তশালীদের আশ্রয়স্থল ও আমোদকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে বহু হোটেল, রেস্তোরাঁ ও রিসোর্ট।

দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাস আল খাইমার যাত্রাপথ ৪৫ মিনিটের। মনোরম পরিবেশের জন্য অনেক দিন ধরেই পর্যটকদের আকর্ষণের জায়গা এটি। রাস আল খাইমা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই বিদেশী সংস্থাগুলোকে বিলাসবহুল হোটেল, শিল্প ও অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

পর্যটন বিশেষজ্ঞদের দাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিনিয়োগের পরিবর্তে নাগরিকত্ব দেয়ার প্রকল্পের কারণেও অনেক বিত্তশালী রাস আল খাইমাতে বিনিয়োগ করতে পারে। যার ফলে এই শহরটি খুব শিগগিরই আরবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হবে। যা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে টেক্কা দিতে পারে দুবাইকেও।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিজিটাল ও ভার্চুয়াল সম্পদ সংস্থাগুলোর জন্যও একটি নতুন এলাকা তৈরি করছে রাস আল খাইমা। বহু আন্তর্জাতিক সংস্থাও ইতোমধ্যেই রাস আল খাইমাতে ব্যবসা শুরুর জন্য নথিভুক্তিকরণ শুরু করেছে।

রাস আল খাইমায় নাকি একটি বিলাসবহুল ভ্রমণতরী সংস্থা বানানোর পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। টেনিস তারকা রাফায়েল নাদাল ও ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন ফার্নান্দো আলোনসোর মতো তারকাদের যেন ওই ভ্রমণতরী সংস্থার ক্লায়েন্ট বানানো যায়, তা নিয়েও নাকি পরিকল্পনা চলছে।

আয়তনে বাকি আমিরাতগুলোর তুলনায় ছোট হওয়ার কারণে অতীতে অনেক বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে রাস আল খাইমা কর্তৃপক্ষকে। বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ঘোষণা করে তা বাতিলও করে দেয়া হয়েছিল।

২০১৩ সালে, রাস আল খাইমাতে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগে ফুটবল থিমযুক্ত বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল স্পেনের ফুটবল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি।

তবে দুবাইয়ের মতো শহরের তুলনায় রাস আল খাইমায় অনেক খালি জমি পড়ে থাকায়, এই আমিরাতকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

অনেক আগে থেকেই আরবে আগত পর্যটকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র ছিল রাস আল খাইমা। বর্তমানে প্রশাসন আরো দৃঢ়প্রত্যয়ী যে পর্যটকদের উন্নতমানের জীবনযাত্রা ও পরিষেবা দেয়া হলে সেখানে ব্যবসার পসার আরো বাড়বে।

পাশাপাশি পাশ্চাত্যের দেশগেুলোর বিত্তশালীদের নজর কাড়তেও ওই শহর নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।

রাস আল খাইমার শাসক হলেন শেখ সৌদ বিন সাকর আল কাসিমি। আপাতত আমিরাতকে অর্থনৈতিকভাবে আরো সমৃদ্ধি করার দায়িত্ব তিনি তার মেয়ে আমনে আল কাসিমের ওপর দিয়েছেন। আমনের হাত ধরেই দ্রুত বদলে যাচ্ছে রাস আল খাইমা।

মনে করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যেই রাস আল খাইমাতে বার্ষিক পর্যটকদের ভিড় বর্তমানের তুলনায় চার গুণ বাড়বে। বাড়বে জনসংখ্যাও। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে