রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

রঙিন সাজে কক্সবাজারে  বিচ কার্নিভাল উৎসব 

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:১২

পর্যটন এলাকা হিসেবে কক্সবাজারের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের জমকালো আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। বিশ্বের বুকে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে তুলে ধরতে ও পর্যটন রাজধানী হিসেবে সমাদৃত কক্সবাজারকে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে এই উৎসব। যেখানে সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলরাশির আভাস মন ছুঁয়ে যায়।

দেখা মেলে সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর ছবির মতো দৃশ্য। সারি সারি ঝাউ গাছ, পায়ের নিচে নরম বালি আর সামনে মন উদাস করা সমুদ্র। নীল সাগর আর সারি সারি পাথরগুলো একবার সমুদ্রের লোনা জলে ডুব দেয় আবার যেন ভেসে ওঠে। শৈল্পিক পাথরগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে অস্তগামী সূর্যের সৌন্দর্য কল্পনাকেও হার মানায়। বিশেষ করে গোধূলি বেলার রক্তিম আভার রং যখন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, তখন চারপাশের সৌন্দর্য দেখে মনে হয় যেন মুঠো মুঠো সোনা ছড়িয়ে আছে সৈকত জুড়ে।

রঙিন সাজ সাজ রবে সপ্তাহজুড়ে কক্সবাজারে বিচ কার্নিভাল উৎসব আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ‘পর্যটনে পরিবেশ বান্ধব বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্যে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা আয়োজনে শুরু হচ্ছে। পর্যটন মেলা ও কার্নিভালকে ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে হোটেল কল্লোল প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে টু্যুরিস্ট পুলিশের গেট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে তৈরি করা হচ্ছে স্টল। পর্যটন মেলাকে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করতে ২০০টির মতো স্টল স্থাপন কাজ প্রায় শেষ।

পর্যটন মেলার আহ্বায়ক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, পর্যটন মৌসুমকে বরণে ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল করছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। গতবারের চেয়ে এবারের আয়োজন হবে আরও বড়। দুই শতাধিক স্টলের পাশাপাশি নতুনভাবে এবার যোগ হচ্ছে বিচ ম্যারাথন।

তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের কথা চিন্তা করে কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল মালিক থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সব হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে ৬০ শতাংশ বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসঙ্গে সব রেস্তোরাঁয় খাবারের ওপর ১৫ ছাড়, সব বাস ভাড়ায় ২০, হেলিকপ্টার জয় রাইডে ১০ ছাড়, টিউব ভাড়ায় ৩০ ছাড়, কিটকট চেয়ার ভাড়ায় ৩৩ ছাড়, প্যারাসাইলিংয়ে ৩০ ছাড়, জেটস্কি ও বিচ বাইকিংয়ে ৩৩ ছাড়, লকার ভাড়া, গাড়ি পারকিং ও ফান গেইমে ৫০ ছাড়, ফটোগ্রাফারদের তোলা ছবি প্রতি কপি ২ টাকা, চাঁদের গাড়ি-বাড়ি ও বিমান ভাড়ায় বিশেষ ছাড়। একই সঙ্গে রয়েছে বিনামূল্যে সার্কাস শো। ইনানীর রেজুখালে কক্স কায়াকিংয়ে পর্যটন মেলা উপলক্ষে ২০ ছাড় রয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল উপলক্ষে পর্যটকদের আনন্দ দিতে এর মধ্যে উন্মোচন হয়েছে ‘থিম সং’। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই সকাল ১০টা হতে ঘণ্টাব্যাপী চলবে সৈকত এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান। ২৫ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী চলবে শিশুদের চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতা। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে পুনরায় লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত থাকছে বর্ণাঢ্য র‌্যালি। সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধন হবে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। থাকছে বৃক্ষরোপণ ও আলোচনা সভা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে মহেশখালী জেটি পর্যন্ত চলবে নৌ-র‌্যালি।

এছাড়াও প্রতিদিন সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র‌্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং কনসার্ট। একই সঙ্গে থাকবে আচার, শুঁটকি ও পিঠাসহ হরেক রকমের আয়োজন।

হোটেল কক্সস-টুডে’র ব্যবস্থাপক আবুল তালেব শাহ বলেন, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল উপলক্ষে ৫০ শতাংশ বিশেষ ছাড়ে রুমে পাবে পর্যটকরা। আর রেস্তোরাঁয় ১০ শতাংশ ছাড দেওয়া হয়েছে। এ বিশেষ ছাড় এখন থেকে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত থাকবে। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যাতে করে এই উৎসব উপভোগ করাসহ বেড়ানোর আনন্দে মেতে উঠবে। সি-গাল হোটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান সিদ্দিকী রুমি বলেন, পর্যটন নগরীতে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল উৎসব হচ্ছে এটা আনন্দের। কক্সবাজারে প্রতিটি হোটেলে বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সবাই যাতে এই উৎসব উদযাপন করতে পারে সেজন্য সবার পাশে আমরা রয়েছি।

কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির আওতাধীন ১১০টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। মেলা উপলক্ষে এসব রেস্তোরাঁ ১৫ শতাংশ বিশেষ ছাড় ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ ছাড় আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। কোনো ব্যবসায়ী যদি ঘোষিত ১৫ শতাংশ না দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নগরী কক্সবাজারে এখন সারা বছরই পর্যটক সমাগম থাকছে। পর্যটন দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মেলা কক্সবাজারকে বিশ্বময় অনেক বেশি সমাদৃত করবে। মেলা উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা থাকবে সৈকত ও মেলা প্রাঙ্গণ। তাছাড়া নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিশেষ টিম মাঠে কাজ করবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটন দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মেলা কক্সবাজারকে বিশ্বময় আরও সমাদৃত করবে। আশা করছি, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালে লোকারণ্য হবে পুরো কক্সবাজার। সার্বিক নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত। অনুষ্ঠান সফলতার জন্য সবার সহযোগী কামনা করেন তিনি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে