শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী রেষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকের ওপর হামলা, আহত ৪

বামনা (বরগুনা) প্রতিনধি
  ১৮ জুলাই ২০২১, ১৮:২০

বরগুনার বামনা উপজেলার ৩ নং রামনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকের ওপর হামলা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিজয়ী প্রার্থী ও তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

হামলায় উভয় পক্ষের চারজন সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছে। গুরুতর আহতরা হলেন, গোলাঘাটা গ্রামের বিমল চন্দ্র শীলের ছেলে অসীম শীল (৩৫), পরাজিত চেয়ারম্যান আ. খালেক জমাদ্দারের ভাতিজা ও বারেক জমাদ্দারের ছেলে উজ্জ্বল জমাদ্দার (৩২), সিদ্দিক বাদশার ছেলে মো. জুয়েল (২১) ও বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থক কালু চৌকিদারের ছেলে ফরিদ চৌকিদার (৩৫)।

পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক গুরুতর আহত তিনজন বর্তমান চেয়ারম্যানের ভয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।

এছাড়া আরেক আহত চেয়ারম্যান সমর্থক ফরিদ চৌকিদার বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত বামনা থানায় কোনো পক্ষই মামলা করেননি।

গত শনিবার রাত ৮টার দিকে রামনা বৈকালীন বাজারে এ হামলার ঘটনাটি ঘটে।

অভিযোগ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম জমাদ্দার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আপন চাচাতো ভাই আ. খালেক জমাদ্দার। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত শনিবার নজরুল ইসলাম জমাদ্দারের সমর্থকরা পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক মো. জুয়েলের সঙ্গে বাগবিতন্ডা করেন। একপর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে বিষয়টি পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক ও তার ভাতিজাকে জানালে তারা রামনা বাজারে অবস্থান করা বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দারকে সরাসরি নালিশ জানাতে আসেন। সে সময় চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা সমর্থকরা আকস্মিক নালিশ দিতে আসা পরাজিত প্রার্থীর ভাতিজা উজ্জ্বলের ওপর ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এ সময় উজ্জ্বলের পাশে থাকা অসীম শীলের মাথায় ব্যাট দিয়ে আঘাত করে তারা। এতে অসীমের মাথা ফেটে যায়। স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, অসীমকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরে তার ফেটে যাওয়া মাথা সেলাই করে চিকিৎসকরা। সেলাই শেষে তাকে ক্লিনিক থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসেন হামলাকারীরা। পরে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটায় তাকে। এ হামলায় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়।

রামনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার সমর্থক ফরিদের সঙ্গে খেলা নিয়ে বাগবিতন্ডা হয় জুয়েল নামে একজনের। জুয়েল ঘটনাটি আমার প্রতিপক্ষদের জানায়। তারা সজ্জিত হয়ে আমার কাছে নালিশ জানাতে আসে। এ সময় সাবেক চেয়ারম্যানের ভাতিজা বারেক জমাদ্দারের ছেলে পপিন জমাদ্দার টর্চলাইট দিয়ে ফরিদকে আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। এ সময় আমার অন্য সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালায়। বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা করার জন্য অসীম শীল নিজের শরীর নিজেই রক্তাক্ত করে হাসপাতালে ভর্তি হয়।

আহত উজ্জ্বল জমাদ্দারের বাবা বারেক জমাদ্দার অভিযোগ করেন, যখন অসীম তার ছেলেকে মারছিল সেখানে বর্তমান চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। তার নির্দেশেই ওদের ওপর হামলা চালানো হয়।

এছাড়াও তিনি অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এবং বামনা থানার এসআই মো. সিদ্দিকুর রহমানের উপস্থিতিতে তার সমর্থকরা অসীমের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।

এদিকে এই হামলার পরে বর্তমান চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা বামনা থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন উজ্জ্বল জমাদ্দারে ব্যবসায়িক দোকানে অস্ত্র মজুদ রয়েছে। বামনা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বশিরুল আলম তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে দোকানটির সামনে গ্রাম পুলিশের পাহারার ব্যবস্থা করেন। রোববার দুপুরে পুলিশ দোকান মালিক বারেক জমাদ্দারকে নিয়ে দোকানটি খুলে তল্লাশি চালায়। এ সময় দোকানের ভিতর থেকে কিছুই পায়নি তারা।

এ ঘটনায় বামনা থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, আমি ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। উভয় পক্ষের উত্তেজিত জনতাদের শান্ত করি। তবে কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় বামনা থানায় কোনো মামলা দায়ের করেননি। মামলা হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।

এছাড়া উজ্জ্বল জমাদ্দারের দোকানে অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ পাওয়ার পরে আমি নিজে ওই দোকানটিতে তল্লাশি চালাই, সেখানে কোনো অবৈধ কিছু পাওয়া যায়নি।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে