মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

​​​​​​​সিলেটে বন্যা : বিশুদ্ধ পানির অভাব ও দুর্গন্ধে নাকাল বানভাসিরা

সিলেট অফিস
  ২৪ মে ২০২২, ১৭:১৩
আপডেট  : ২৪ মে ২০২২, ১৭:১৯

সিলেট নগরীতে পানি কমলেও ঘরবাড়িতে বসবাসে বানভাসিদের নতুন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব ও ময়লা-কালো রঙের পানির তীব্র দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। কিছু এলাকার বন্যার পচা পানি থেকে মানুষের রোগবালাই হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। অথচ নেই সিটি করপোরেশনের জোরালো কোনো উদ্যোগ। এদিকে, বন্যার কারণে সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অনেক এলাকার সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

নগরী ঘুরে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় কোমর পানি ছিল এখন সেখানে পানি নেই বললে চলে।আবার কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি রয়েছে। পানি কমতে শুরু করায় বন্যায় প্লাবিত এলাকার মানুষের শরীরের দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা।অনেক জায়গায় বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব রয়েছে। সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে নর্দমার পানিও মিশে থাকায় কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কমালগড়,ঘাসিটুলা,ছড়ারপাড় এলাকায় দেখা যায়,পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে চলছে। বিশেষ করে জ্বর, সর্দি, কাশি, চর্মরোগ ও ডায়রিয়ায় মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।এছাড়াও সাপ্লাই পানির মধ্যে এখনো দুর্গন্ধ রয়েছে। এসব পানি ফুটিয়ে খেতে হচ্ছে।

ঘাসিটুলার আরজু মিয়া বলেন,সরকারি কোনো চিকিৎসা সেবা আমরা এখনো পাইনি। মানবিক টিম সিলেট নামে একটি সংগঠন গতকাল আমাদেরকে খাবার পানি, ওষুধ দিয়েছে। হাত পায়ে চুলকানি ও ডায়রিয়া হয়েছে পরিবারের দুজনের।

ছড়ারপাড়ের আনিছ বলেন, ঘরের মধ্যে এখনো পানি রয়েছে। চারদিকে ময়লা পানি পড়ে আছে। দুর্গন্ধের জন্য খুব কষ্টে আছি।আর লাইনের পানি খাওয়া যায় না। লাল রঙের ময়লা পানি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান বলেন,পানি নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখা পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের সিভিল সার্জন এস এম শাহরিয়ার বলেন, সিলেট জেলা ও নগরের বন্যাকবলিত এলাকায় ১৪০টি চিকিৎসা দলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অন্তত ১১ হাজার বানভাসি মানুষকে নানা ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পানিবাহিত রোগ এড়াতে পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি বিতরণও করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার নতুন করে ৪৩ জন ডায়রিয়ায়, ২ জন শ্বাসকষ্টে এবং ৩ জন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত জেলায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন ৫৩ জন।’

এদিকে, বন্যার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেটের সড়ক অবকাঠামো। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার সড়কে এখন বন্যার ক্ষত। এসব ক্ষত সারাতে, সড়কগুলো সংস্কার করতে প্রয়োজন প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

সড়ক ও এলজিডি অফিস জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে সড়ক ও জনপথের (সওজ) অধীনস্থ প্রায় ৭২ কিলোমিটার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ২৬৭ কিলোমিটার এবং সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৪০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে।

সওজ কার্যালয় সূত্র জানায়, সারি-গোয়াইনঘাট সড়কের ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার, সিলেট-তামাবিল-জাফলং সড়কের ১ দশমিক ২০ কিলোমিটার, কানাইঘাটের দরবস্ত-কানাইঘাট-শাহবাগ সড়কের ১৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এবং সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় তলিয়ে যায়। এ ছাড়া বিশ্বনাথ-লামাকাজি সড়ক, কোম্পানীগঞ্জ-ছাতক সড়ক, শেওলা-সুতারকান্দি সড়ক এবং বিমানবন্দর-বাদাঘাট-কুমারগাঁও সড়কের বিভিন্ন অংশ ছিল পানির নিচে।

সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্যায় সওজের অধীনস্থ ১০টি সড়কের প্রায় ৭২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক সংস্কারে প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকা লাগবে।

এলজিইডির কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যায় গোয়াইনঘাটে ২৭টি সড়কে ৮২ দশমিক ১৩ কিলোমিটার, কানাইঘাটে ১৫টি সড়কে ৩০ দশমিক ৫ কিলোমিটার, জৈন্তাপুর উপজেলার ১১টি সড়কে ৩২ কিলোমিটার, সদরের ১২টি সড়কে ২১ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার, গোলাপগঞ্জে ১০টি সড়কে ২২ কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জে চারটি সড়কে ৩৪ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার, দক্ষিণ সুরমার চারটি সড়কে সাড়ে তিন কিলোমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে একটি সড়কে দেড় কিলোমিটার, ওসমানীনগর উপজেলায় একটি সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার ও বালাগঞ্জে একটি সড়কে দেড় কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবির বলেন, কিছু কিছু সড়কে এখনও পানি থাকায় পুরো হিসাব পেতে আরও কয়েকদিন লাগবে। তবে এখন পর্যন্ত ১১১টি সড়কের প্রায় ২৬৭ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া এলজিইডির দুটি কালভার্ট ভেঙেছে। এসব সংস্কারে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা লাগতে পারে।

প্রসঙ্গত, সিলেটে গত ১০ মে থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। এর সাথে উজান থেকে নেমে আসা ঢল যুক্ত হয়ে বন্যায় কবলে পড়ে সিলেট। সুরমা উপচে পানি ঢুকে পড়ে সিলেট মহানগরীর সিংহভাগ এলাকায়। গত শুক্রবার দিনগত রাত থেকে কমতে শুরু করে পানি। বর্তমানে বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে