মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০
walton

চরফ্যাশনে সাবেক স্ত্রীর মামলায় হয়রানির অভিযোগ 

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪১

ভোলার চরফ্যাশনে প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক মো.ছায়েদুর রহমান তার সাবেক স্ত্রী তানজিলা আক্তার শান্তা'র বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প সাজিয়ে বিভিন্ন ভাবে মানহানি ও হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। শান্তা তালাক প্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে মিথ্যা যৌতুক মামলা, গণমাধ্যমে অসত্য সংবাদ প্রকাশ ও ফেসবুকে একাধিক ফেক আইডি খুলে মানহানিকর পোস্টসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকিধামকি দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে বিষনভাবে হয়রানি করে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন স্কুল শিক্ষক ছায়েদুর রহমান।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে মো. ছায়েদুর রহমানের সাথে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ইং তারিখে একই এলাকার মো. জামাল হাওলাদারের মেয়ে তানজিলা আক্তার শান্তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়েতে নববধূকে প্রায় দুই লাখ টাকার বিভিন্ন পোশাকাদি ও স্বর্ণালংকার দেয়া হয়েছে। যা তার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। তাই বিয়ের পরপরই স্ত্রী শান্তা গলার নেকলেস ও হাতের রুলি বানিয়ে দিতে স্বামী ছায়েদুর রহমানকে চাপ প্রয়োগ করে। একই সাথে দূরে কোথাও হানিমুনে যাওয়ার বায়না ধরে যা তার স্বামী ছায়েদুর রহমানের আর্থিক ভাবে সাধ্যের মধ্যে ছিল না। শান্তার চাহিদা মত ইচ্ছে পূরণ করতে না পারায় স্বামীকে উচ্চ বাক্যে গালমন্দ ও তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। এসব ঘটনার মধ্যেই একদিন নববধূ শান্তা তার সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হওয়ার উপযুক্ত প্রমাণ মিলে ছায়েদুর রহমানের নিকট। উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত তাদের মধ্যে চলছে ঝগড়া ও কথার কাটাকাটি। ঝগড়ার মধ্যে একদিন উত্তেজিত হয়ে স্বামী ছায়েদুর রহমানকে কিল,ঘুসি ও লাথি মেরে বাসা থেকে বেড়িয়ে বাবার বাড়ি চলে যায় স্ত্রী শান্তা। বিষয়টি তার শশুর-শাশুড়িকে জানালেও কোন বিচার পাইনি ছায়েদুর রহমান।

ভুক্তভোগী ছায়েদুর রহমান জানান, তার স্ত্রী ছিলেন অস্বাভাবিক উগ্র, উচ্চবিলাসী ও লোভী প্রকৃতির। অনেকবার তাকে বুঝিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও ছোটলোক, ফকিন্নি ও ভিক্ষুক বলে আমাকে অপমান করত। এত মান অপমান সহ্য করেও তাকে নিয়ে সংসার করার উদ্দেশ্যে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। কোন কিছুতেই সংসার করবে না বলে শান্তা স্বামীকে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। অতঃপর স্ত্রীর ঘটে যাওয়া কর্মকাণ্ড ও ফিরে না আসার বিষয়টি বিবেচনায় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের ও পরিবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৬ মে ২০২৩ ইং তারিখে দেশের প্রচলিত আইন ও ইসলাম শরিয়া মোতাবেক স্ত্রী তানজিলা আক্তার শান্তাকে তালাক প্রদান করেন। তালাকের সংবাদ পেয়ে গত ২ জুন ২০২৩ ইং তারিখে শান্তা ঢাকা বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হয়রানি মুলক মিথ্যা যৌতুক মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৫৪৬/২০২৩।

ছায়েদুর রহমান আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত মামলায় বিভিন্ন অজুহাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে ১২ লাখ ৭২ হাজার টাকা যৌতুক এনেছি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক। তারা কোন প্রকারে আমাকে যৌতুক দিয়েছে বা স্ত্রী থাকা অবস্থায় শান্তাকে নির্যাতন করেছি এই মর্মে সঠিক তথ্য আদালতে উপস্থাপন করতে না পারায় এবং আমাদের সঠিক কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বিজ্ঞ আদালত আমাকে স্থায়ী জামিনের আদেশ দিয়েছে। মামলায় আমাকে আটকাতে না পেরে একইভাবে মিথ্যা তথ্য লিপিবদ্ধ করে ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব মহোদয়ের নিকট লিখিত বিচার দাবি করেন। এমপি মহোদয় বিষয়টির মীমাংসায় স্থানীয় ওসমানগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর বিচারের ভার প্রদান করেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে ওসমানগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ উভয় পক্ষের সালিশ গনের মাধ্যমে ঘটনার একটি ফলপ্রসূ ফয়সালা হয়। বিচারকগণের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিবাহের কাবিনের টাকা, ভরণপোষণ ও আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী শান্তাকে দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তবে এই টাকা গ্রহণ করতে তাদের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা নিজের জিম্মায় তুলে নিতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। মামলা তুলে না নেয়া পর্যন্ত উক্ত টাকা প্রধান বিচারক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়ার জিম্মায় থাকবে। বিচারকগণের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছায়েদুর রহমান নির্ধারিত টাকা চেয়ারম্যানের নিকট জমা দিয়েছেন। তবে স্থানীয় সালিশের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে শান্তার পরিবার মামলা না তুলে এখনো বিভিন্নভাবে ছায়েদুর রহমান ও তার পরিবারকে হয়রানির চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সাইদুর রহমান এ সকল হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

ওসমানগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়া জানান, সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার নিকট সাইদুর রহমান নির্ধারিত টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু কি কারনে বা কোন উদ্দেশ্যে মেয়ে পক্ষ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এখনো এগিয়ে আসছে না তা আমার জানা নেই।

অভিযুক্ত তানজিলা আক্তার শান্তা জানান, তার স্বামী বিনা কারণে তাকে তালাক দিয়েছ। তাকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করে তার পরিবার থেকে ১২ লাখ ৭২ হাজার টাকা যৌতুক নিয়েছে। স্বামীর চাহিদা মত আরও টাকা না দিতে পারায় তাকে তালাক দেয়া হয়েছে। আমি আমার সকল ক্ষতিপূরণ ও নির্যাতনের সঠিক বিচার চাই বলে জানিয়েছেন শান্তা।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
shwapno

উপরে