স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকার সাভারে কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধের পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়েছে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার মহিষখলায়। এর স্থাপত্য কৌশলেও রয়েছে ভিন্নতা।
গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা ‘সবকটা জানা খুলে দাও না’ গানটির আঙ্গিকে নির্মাণ করা হয়েছে এ স্মৃতিসৌধ। এ মহিষখলাই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সাব সেক্টর। কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় স্মৃতিসৌধটি এখন হুমকির মুখে রয়েছে। স্মৃতিসৌধের পশ্চিম কিনার ঘেঁষে বয়ে গেছে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা কাউয়া রংধী নদী (মহিষখলা নদী)। পশ্চিম পাশে রক্ষাপ্রাচীর না থাকায় যেকোনো সময় নদীগর্ভে চলে যেতে পারে স্মৃতিসৌধটি।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ তৎকালীন জেলা প্রশাসক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমনের পরিকল্পনায় ও স্থপতি রাজন দাসের নকশায় মহিষখলা নদীর পূর্বদিকে ১৮ হাজার ৭০০ বর্গফুট জায়গায় ২০১২ সালে স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়। জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। ১৯৭১ সালের আগে স্মৃতিসৌধের ওই স্থানটিতে একটি ফরেস্ট অফিস ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই স্থান থেকে তৎকালীন পাঁচজন সংসদ সদস্য ও মুক্তযুদ্ধের সংগঠকরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরায় ট্রেইনিংয়ের জন্য পাঠাতেন। বর্তমানে স্মৃতিসৌধটি সীমানাপ্রাচীর ও রক্ষাপ্রাচীরের অভাবে শ্যাওলা জমে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকলেও বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। দ্রুত স্মৃতিসৌধের রক্ষাপ্রাচীর নির্মাণ করা না হলে যেকোনো সময় এটি মহিষখলা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের মূল স্থাপনার পশ্চিম দিকের মাটি সরে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণহীন ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে স্মৃতিসৌধটি। স্মৃতিসৌধের প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ও জনসাধারণ।স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ধর্মপাশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. নূরুল হক বলেন,' মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই মহিষখলা স্মৃতিসৌধটি বহুদিন যাবত অবহেলায় পড়ে রয়েছে। স্মৃতিসৌধটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ খান সহ দেশের বহু বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টরের ১ নম্বর সাব-সেক্টর মহিষখলায় এসেছিলেন। স্মৃতিসৌধটি মহিষখলা নদীর পাড়ে অবস্থিত। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে ঝুঁকির সম্মুখীন। নদীর পাড়ে প্রতিরক্ষা দেয়াল না থাকায় স্থাপনাটির পাড় ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। স্থায়ীভাবে স্মৃতিসৌধটির প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ ও রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগীতা প্রয়োজন।
বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনয়িন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মহিষখলা অঞ্চলে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধটির পশ্চিম পাশে গার্ডওয়াল না থাকায় যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। তাই স্মৃতিসৌধটি রক্ষণাবেক্ষণ ও ভাঙন ঠেকাতে গার্ডওয়াল এবং সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা প্রয়োজন।
বংশিকুন্ডা উওর ইউপির চেয়ারম্যান বিল্লাহ হোসেন বলেন,মহিষখলা মহান স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে বেহাল অবস্থায় আছে। তাই স্মৃতিসৌধটি রক্ষণাবেক্ষণ ও নদীর পাড়ে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরনবী তালুকদার বলেন, স্মৃতিসৌধটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনেক কাজ সম্পাদান করতে হবে। যেমন সোলার ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন, বিদ্যুৎ সংযোগ, পশ্চিম পাশে রক্ষাপ্রাচীর ও চারপাশে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করতে হবে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শীতেষ চন্দ্র সরকার জানান, এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুুট বলেন, এটা জেলা পরিষদের স্থাপনা। তাই এর দেখভাল করার দ্বায়িত্ব জেলা পরিষদের। আমি দ্রুত লোক পাঠিয়ে স্মৃতিসৌধের পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
যাযাদি/ এস