গাজীপুরের শ্রীপুরে রামিমুল হাসান বিজয় নামে এক স্কুলছাত্রকে হত্যার ঘটনায় মা'য়ের দায়ের করা মামলায় নিহত শিশুর আপন চাচাসহ ৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। ভাতিজাকে হত্যার পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির নাটক সাজিয়ে অপহরণের জিডি করেছিলেন শিশুর চাচা জুয়েল বেপারী। রোববার তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও আটকদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে জঙ্গল থেকে নিহত ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
সোমবার (২অক্টোবর) বিকেলের দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নিহত রামিমুল হাসান বিজয়ের চাচা গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া চন্নাপাড়া গ্রামের মৃত নূর হোসেন বেপারীর ছেলে জুয়েল বেপারী (৩০), একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে জিহাদ (১৭) ও ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার ধলিয়া গ্রামের মজনু মিয়ার ছেলে শামীম (২৪)।
পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়," পরিকল্পনা করে টিকটক করার কথা বলে বিজয়ের আপন চাচা জুয়েল বেপারী তাকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে শ্রীপুর থানার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে ওই গ্রামের খিলাউফুই টেক নামক গজারি বনের ভিতর নিয়ে চাচাসহ ৩জন মিলে ধারালো অস্ত্র দ্বারা শিশু রামিমুল ইসলাম বিজয়কে গলা কেটে দেহ হতে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়। চাচা জুয়েল বেপারী হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অতি উৎসাহি হয়ে শিশুর মায়ের সাথে কোনো প্রকার পরামর্শ না করেই শ্রীপুর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি এন্ট্রি করে। বিজয়ের নিখোঁজের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার তালবাহানামূলক কথা বলে উক্ত নিখোঁজের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে চাচা জুয়েল। শিশু নিখোঁজের পর ছেলের মোবাইল নম্বর থেকে শিশুর মা'কে ফোন করে ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়ে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন হিসেবে দাবি করা হয়।
পুলিশ জানায়, ব্যাংকে থাকা ভিক্টিম বিজয়ের বাবার জমা ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই পরিকল্পনা করে ওই ২জন ভাড়াটে অপহরণকারীর সহয়তায় বিজয়কে অপহরণের পর হত্যা করে জঙ্গলে লাশ গুম করার চেষ্টা করা হয় ।প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রথমে জিডির সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে জিহাদকে চন্নাপাড়া এলাকা থেকে ও নেত্রকোনার নান্দাইল থানার ধলিয়াপাড়া গ্রাম থেকে শামীমকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে শ্রীপুরের কেওয়া চন্নাপাড়া থেকে বিজয়ের চাচা জুয়েল বেপারীকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ মরদেহের সন্ধান পায়। পরে ওই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম মোহনা যায়যায়দিনকে বলেন, "পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজের জিডি পাওয়ার পরপরই শ্রীপুর থানা পুলিশ বিজয়কে উদ্ধারে কাজ শুরু করে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় অপরাধীদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২৬ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের চন্নাপাড়া গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয় রামিমুল হাসান বিজয়। সে শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের চন্নাপাড়া গ্রামের রোমান বেপারীর ছেলে এবং স্থানীয় শতদল কিন্ডার গার্টেনে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। খবর পেয়ে আত্মীয়-স্বজনসহ সবাইকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরপর সবার পরামর্শে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে বিজয়ের চাচা । অপহরণের একদিন পর ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ১০ মিনিটে বিজয়ের পরিবারের মুঠোফোনে কল করে অপর প্রান্ত থেকে একটি পুরুষ কণ্ঠে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কণ্ঠটি একটু বয়স্ক ব্যক্তির মনে হয়েছে। পরে জিডির পর বিজয়ের চাচা জুয়েল বেপারীসহ ৩জনকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ মরদেহের সন্ধান পেলে রোববার বিকেলের দিকে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।
যাযাদি/ এস