শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

জীবননগরে বন্ধ শতাধিক হাস্কিং মিল : ধারদেনায় জর্জরিত মালিকরা

জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
  ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:১৪
জীবননগরে বন্ধ শতাধিক হাস্কিং মিল : ধারদেনায় জর্জরিত মালিকরা
জীবননগরে বন্ধ শতাধিক হাস্কিং মিল : ধারদেনায় জর্জরিত মালিকরা

এক সময় শতশত হাস্কিং মিলের (চালকল) মালিক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের পদচারণায় প্রাণবন্ত থাকতো চুয়াডাঙ্গার জীবননগর। তবে অটোরাইস মিলের দাপটে টিকতে না পেরে এসব চালকলের বেশিরভাগই এখন বন্ধ হয়ে গেছে।

হাস্কিং মেশিনের শব্দ ও শ্রমিকদের কোলাহলে একসময় সরগরম থাকা এসব চালকল এখন নিস্তব্ধ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। বেশকিছু মালিক চালকলের চাতাল গাড়ির গ্যারেজ ও অন্য কাজে ব্যবহারের জন্য ভাড়া দিয়েছেন। এসব হাস্কিং মিলে কর্মরত দেড় থেকে দুই হাজার শ্রমিক জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাস্কিং মিলগুলোর ধান-চাল তৈরি করতে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। আবহাওয়া, বিশেষ করে বর্ষা ও শীতকালে এক চাতাল (২০০ মণ) ধান শুকানো থেকে শুরু করে চাল করা পর্যন্ত ১৫-২০ জন শ্রমিকের ৭-১০ দিন সময় লাগে। হাস্কিং মিলগুলো প্রতিযোগিতার বাজারে সময়মতো চাল উৎপাদন করতে পারে না। এ জন্য সময়মতো বাজার ধরতে না পারায় অনেকটা পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। টানা লোকসানে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক হাস্কিং মিল। সরেজমিনে জীবননগর উপজেলার পেয়ারাতলা ও ল²ীপুর এলাকায় অবস্থিত হাস্কিং মিলগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মিলগুলো বন্ধ থাকায় চাতালে ঘাস গজিয়েছে, ভেঙে পড়েছে চিমনি। অন্যদিকে পাশেই অটোরাইস মিলে অল্প শ্রমিক নিয়ে কম সময়ে প্রচুর পরিমাণ চাল উৎপাদন করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০ বছর আগেও জীবননগর উপজেলায় শতাধিক হাস্কিং মিল চালু ছিল। এখন হাতেগোনো মাত্র দু-একটি চালু আছে। বাকি সব মিল বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব হাস্কিং মিল চালু রয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। এসব মিলের মালিকরা ব্যাংক ঋণ ও ধারদেনায় জর্জরিত। এসব হাস্কিং মিলে দেড় থেকে দুই হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। তারা অনেকেই হয়েছেন বেকার আবার অনেকে পেশা বদল করে জীবিকানির্বাহ করছেন। অন্যদিকে, উপজেলায় ৭টি অটোরাইস মিল চালু রয়েছে। অটোরাইস মিলে উৎপাদিত চালের চেয়ে হাস্কিং মিলে উৎপাদন খরচ বেশি। মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমিক সংকট, ধান ও চালের দামে অসামঞ্জস্য হওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হাস্কিং মিল।

হাস্কিং মিল মালিকরা জানান, ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লেগে যায়। আর অটোরাইস মিলে এক-দুদিনের মধ্যে চাল উৎপাদন করে বাজারজাত করে ভালো দাম পায়। কিন্তুতাঁদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। উপজেলার ল²ীপুর এলাকার হাস্কিং মিল মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ক্রমাগত লোকসানের মুখে তিন বছর আগে মিল বন্ধ করে দিয়েছি। অটোরাইস মিলে উৎপাদন ব্যয় আর আমাদের হাস্কিং মিলের উৎপাদন ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য আকাশ পাতাল। অটোরাইস মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাজারে টিকে থাকা সম্ভব না। এছাড়া শ্রমিক সংকট, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যা তো আছেই।’

এদিকে, লোকসানের কারণে এসব কারখানা বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়েছেন এসব কারখানার দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিক। শ্রমিকরা বলেন, আগে দিনরাত কাজ করেও সামাল দেয়া যেত না। আর এখন বেকার দিন কাটাতে হচ্ছে। পূর্বে হাস্কিং মিলের শ্রমিক হযরত আলী বলেন, এসব মিলগুলোতে একসময় অনেক মানুষ কাজ করত। এখন চালকল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই যারা আগে মিলে কাজ করত, তারা এখন পেশা বদল করেছে। অনেকে ভ্যান চালিয়ে ও মাঠে দিনমজুরের কাজ করে ও মহিলা শ্রমিকেরা অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিনযাপন করছেন। জীবননগর লক্ষীপুর মিল এলাকায় প্রায় 3 শতাধিক বিঘা জমি মিল চাতাল বন্ধ হওয়ায় তা এখন পরিত্যক্ত যা চাষাবাদযোগ্য নাই।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে