রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

হাসপাতালের আবাসিক কোয়াটারে মাদকসেবীদের আড্ডা, বেড়েছে চুরি

খোরশেদ আলম, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী)
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৫০
হাসপাতালের আবাসিক কোয়াটারে মাদকসেবীদের আড্ডা, বেড়েছে চুরি

নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কোয়াটার এখন মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী ও অসামাজিক কর্মকান্ডের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। মাদকসেবীদের প্রকাশ্যে অবাধ বিচরণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। অপরদিকে হাসপাতালের আবাসিক কোয়াটার ও মূল ভবনে চোরদের আনাগোনা বেড়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি।

এতে হাসপাতালের পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, সেই সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এখানে কর্মকত ডাক্তার নার্স সহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা: ইসরাত জাহান উপজেলা পরিষদের আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ে বারবার অভিযোগ তুললেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

জানা যায়, সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করলেও হাসপাতালের পরিবেশের উন্নয়ন হয়নি। সন্ধ্যা গড়ালেই প্রতিদিন মাদকসেবীদের কয়েকটি চক্র ভবনগুলিতে বসে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করে। হাসপাতাল মেইনগেইট ছাড়াও সীমানা প্রাচীর টপকে রাতে তারা অবাধে প্রবেশ করে। এরই মধ্যে হাসপাতাল চত্বরে মাদকসেবনে বাধা দেওয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন কর্মচারী। বছরের পর বছর কোয়াটারে কেউ না থাকায় ভবনগুলোতে রাতের আধারে স্থানীয় কিছু বখাটে অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। মাদকসেবীরা প্রায় সময় হানা দেয় ডাক্তার ও স্টাফদের বাসায়। প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাইএর মত নানা ঘটনা ঘটছে। আবাসিক কোয়াটার, চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের ডর্মেটরি, পাম্প ঘরসহ প্রায় ১০টি ভবনে হাসপাতালের কোন মেডিকেল অফিসার কিংবা ষ্টাফ থাকেননা। এসব ভবনের দরজা-জানালা ও বৈদ্যুতিক মালামাল খুলে চোরচক্র নিয়ে যায়। ভবনগুলোতে কেউ বসবাস না করায় এখন মাদকসেবী, ব্যবসায়ী ও অসামাজিক কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত ঘটছে।

সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের সামনেই ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়ক। রাস্তার দুই পাশেই বসবাস করেন ছিন্নমূল বেশ কয়েকটি পরিবার। অভিযোগ রয়েছে এসব পরিবারের বখাটেরা রাতের বেলায় ভবনের ভেতরে জুয়া ও ইয়াবা সেবনসহ নানা অপকর্ম করে।

সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাবুর্চি ওহিদুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারের আবাসিক কোয়াটার সহ প্রায় ১০টি ভবনের দরজা-জানালা খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা। গভীর রাত হলে হাসপাতাল এলাকায় থাকা মুশকিল হয়ে পড়ে। ভবনগুলো থেকে ধোঁয়া বের হয়। এসব ধোঁয়ার গন্ধে বসবাস করা যাচ্ছে না। প্রায় সময় এসব ভবন গুলোতে অসামাজিক কর্মকান্ড সংঘটিত হয়ে থাকে।

এলাবাসী সোহেল ও মামুন অভিযোগ করে জানান, স্বাস্থ কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীর টপকে ও নিচ দিয়ে বহিরাগত মাদসেবীরা প্রবেশ করে। স্বন্ধ্যার পরে কোয়াটারের লোকজন ভয়ে বাসা থেকে বের হতে পারে না। তারা এখানের স্থানীয় না হওয়ায় মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে মুখ খূলতে সাহস পাচ্ছেন না। প্রতিবাদ করলে তাদের সাথে মারমুখি আচরণ করে মাদকাসক্তরা। সোনাইমুড়ী থানার ওসি (তদন্ত) আহসান হাবিব বলেন, উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় হাসপাতালের চুরি ও মাদকসেবীদের আড্ডা নিয়ে কয়েকবার কথা উঠলে পুলিশ টহল বাড়ায়। তবুও বিষয়টি আমরা দেখবো।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা: ইসরাত জাহান বলেন, মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আড্ডা হাসপাতালের ভিতরে। ভবনগুলোর দরজা-জানালা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রায় সময় রোগী ও স্বজনদের মোবাইল সহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় পুলিশের সহযোগীতা চেয়ে অভিযোগ উপস্থাপন করলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে