শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

গোসাইরহাটে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়,অন্তরালে কৃষকলীগ নেতা

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:০২
গোসাইরহাটে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়,অন্তরালে কৃষকলীগ নেতা

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে ফসলি জমির আবাদ হুমকিতে পড়েছে। কৃষিবিদরা বলেছেন, এভাবে মাটি কাটায় ফসলি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। দ্রুত মাটি কাটা বন্ধ না হলে কৃষি উৎপাদন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারী) রাতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গোসাইরহাট বাজারের পূর্ব দিকে নদীর ওপারে ইদিলপুর ইউনিয়নের চর মহিষকান্দি গ্রামে ফসলী জমির মাটি কেটে রাতের আঁধারে বিভিন্ন ইটের ভাটায় বিক্রি করছেন গোসাইরহাট উপজেলার কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম হাওলাদার।

এভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে অবৈধ মাহিদ্রাও ট্রলি গাড়ি বোঝাই করে শ্রমিকরা দেদারসে মাটি কেটে বিভিন্ন ইট ভাটাতে নিয়ে যাচ্ছে।

একাধিকবার উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় মাটি কাটা বন্ধের আলোচনা হলেও উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে চলছে অবৈধভাবে মাটি কাটার মহোৎসব।

উপজেলার রফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, উপজেলার প্রত্যেক এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে একাধিক সিন্ডিকেট। অসহায় কৃষকদের আর্থিক সংকটের সুযোগ নিচ্ছে মাটি খেকো সিন্ডিকেট ও ইটভাটার মালিকরা।

তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না থাকার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এসব মাটি ব্যবসায়ীরা। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, পুকুর ও ঘের খননের নামে সংকুচিত হচ্ছে ফসলি জমি।

গোসাইরহাট উপজেলায় মোট ৬টি ইটের ভাটা রয়েছে৷ পাশের উপজেলা ডামুড্যা ইটের ভাটায়ও দেওয়া হচ্ছে৷ এ ইটভাটাগুলোতে বছরে কয়েক কোটি ইট পোড়ানো হয়। ইট পোড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় মাটিভাটার মালিকরা ফসলি জমি কেটে নিচ্ছে। আবার অনেকে ইটভাটাতে মাটি বিক্রির জন্য কৃষি জমি কেটে পুকুর খনন করেছে। এর ফলে হাজার হাজার একর কৃষি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। ফসলি জমির মালিকরা না বুঝে ইটভাটার মালিকদের প্রলোভনে পড়ে দেদারসে মাটি বিক্রি করছে। কৃষকরা না বুঝে ফসলি জমির এক হাজার মাটি এক হাজার টাকায় বিক্রি করছে। ইট মালিকরা ওই মাটি রাতের আঁধারে অবৈধ ভেকু মেশিন দিয়ে অনেক গভীর করে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক কৃষক ঘের করার নামে ভাটার মালিকদের মাটি দিয়ে দিচ্ছেন।

স্থানীয়রা বলেন, শুধু ফসলি জমি না নদীর পাড়ে মাটি, সরকারি খাঁস জমিসহ সরকারি বিলের মাটিও কেটে নিচ্ছে এসকল সিন্ডিকেট৷ এই সব মাটি ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষমতাশালী।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩, মাটির ব্যবহার হ্রাসকরণ নিয়ন্ত্রণ আইনে উল্লেখ আছে, ইট প্রস্তুতের জন্য ইটভাটার মালিকরা কৃষি জমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। যদি কোনো ব্যক্তি ৫ এ উপধারা (১) এ বিধান লঙ্ঘন করে ইটভাটা প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বা পাহার বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন তা হলে তিনি অনধিক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

নলমুড়ি ইউনিয়নের মাটি বিক্রিতা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘জমির মালিক এখানে পুকুর কেটে মাছের চাষ করবে। এ কারণে আমি তার কাছ থেকে মাটি কিনে ইটের ভাটায় বিক্রি করছি।

ইটভাটার মালিকরা এ আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবিতা সরকার বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে