বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শীতের বিদায়লগ্ন, সৈকতে নেমেছে পর্যটকের ঢল

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০১
শীতের বিদায়লগ্ন, সৈকতে নেমেছে পর্যটকের ঢল

প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে কনকনে ঠান্ডা ও কুয়াশাচ্ছন্ন হিমেল হাওয়ার ক্ষণ। এ সময় কক্সবাজার সমুদ্রতীরবর্তী জেলাটির আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। শীতের বিদায়লগ্নের গল্পটা যেন একটু ভিন্ন আমেজে ধরা দেয় সৈকতে আসা ভ্রমণবিলাসী পর্যটকের কাছে। কক্সবাজারে এখন পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। হোটেল-মোটেলেও ঠাঁই নেই তিল পরিমাণ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা বয়সের লাখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত দর্শনীয় স্পটগুলো। সৈকতে পর্যটকের উপস্থিতি বাড়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছরের শুরু থেকেই ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। তবে এই কিছুদিন ধরে বিপুল পর্যটকের উপস্থিতিতে চাঙা হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সৈকতকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, রেস্তোঁরা, পরিবহণ খাত, বার্মিজ পণ্যের দোকান, শুঁটকি ব্যবসাসহ সামগ্রিক পর্যটন খাত। জেড স্কি ব্যবসায়ী ওমর আকবর বলেন, ‘বন্ধের দিনগুলোতে পর্যটকের চাপ বেড়েছে কক্সবাজারে। পর্যটক যত বেশি আসবে তত আমাদের ব্যবসা ভালো হবে।’

সৈকতের ফটোগ্রাফার সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘শুক্রবার ভোর থেকে সৈকতে রয়েছি এখন বিকাল ৩টা। ব্যবসা ভালো হয়েছে। অনেকদিন পর হাজার তিনেক টাকা আয় করেছি। সব সময় হয় না। কোনোদিন এক টাকাও আয় হয় না।’

ঝিনুক ব্যবসায়ী ইউনুস খান বলেন, ‘শীতের শেষ সময়ে পর্যটক আসায় সবার ব্যবসা এখন চাঙ্গা। আমারও ব্যবসা হচ্ছে। পর্যকরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী ঝিনুক সামগ্রী কিনছেন।’

কোলাহলমুখর শহরের যান্ত্রিকতা থেকে দূরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে শীতের শেষ সময়ে দেশি-বিদেশি বিপুল পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছেন। সৈকতে পা রাখতেই মিষ্টি রোদে নীল সাগরের হিমেল জলরাশিতে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। অনেকেই এ আনন্দঘন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত, আবার অনেকে সেলফি তুলে স্মৃতির পাতায় ছবি লিপিবদ্ধ করছেন। সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, সি-গাল, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি ও ইনানী সৈকতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদের অনেকেই পছন্দের পণ্য, বস্ত্র, শো-পিস ও শুটকি কেনাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকে সৈকতের নির্মল হাওয়ায় পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। পর্যটকরা বেশি ভিড় করছেন সৈকতের সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে। ঘুরতে যাচ্ছেন হিমছড়ি ও পাথুরে সৈকত ইনানীতেও। মুগ্ধ হয়ে দেখছেন মেরিন ড্রাইভ সড়কের সৌন্দর্য। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য বাড়তি আনন্দের যোগ হয়েছে কক্স ভার্নিয়াল, শিল্প ও বাণিজ্যমেলা।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সাজ্জাদুল কবির বলেন, ‘আমরা সপরিবারে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ঘুরতে এসেছি। এসে আনন্দে সময় কাটালাম, বাচ্চারা অনেক আনন্দ করেছে। এখানে এসে পরিবারের সবাই অনেক খুশি।’

কুমিল্লা থেকে আসা রোজিনা শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘পরিবার নিয়ে থাকি আমেরিকায়। কয়েকদিন হলো দেশে এসেছি। যখনি দেশে আসি কক্সবাজার থেকে ঘুরে যাই। এবার কিন্তু পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে এসেছি। এখানকার বিশেষ করে সাগরের তাজা মাছের সঙ্গে হরেক রকমের ভর্তা অসাধারণ। খুব এনজয় করছি। আমি মনে করি, কক্সবাজারে বেড়ানোর শীতকালই উপযুক্ত সময়।’

প্রকৃতির দরজায় কড়া নাড়ছে ঋতুরাজ বসন্ত। আর এ সময়ে শহরের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ও ফ্ল্যাটে প্রায় দুই লাখ পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ভিড় বাড়ায় রুম পেতে ব্যাগপত্র নিয়ে এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে ছোটাছুটি করতেও দেখা গেছে পর্যটকদের। ধারণা করা হচ্ছে, লাখো পর্যটকের পদভারে মুখর বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে পর্যটকের স্রোত।

এদিকে পর্যটন মৌসুমে বিনোদন প্রেমিদের চাপ বাড়ায় প্রতিটি স্পটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট।

হোটেল লং বিচের ম্যানেজার মাসুদ রহমান বলেন, ‘আমাদের হোটেলে শতভাগ বুকিং হয়েছে। এতে আমরা ক্ষতি পূরণ করতে পারব। আশা করছি, পুরো এ মাসটা পর্যটক আসা অব্যাহত থাকবে। কিছুদিন ধরে আমাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। অনেক পর্যটক রুমের জন্য কল দিচ্ছে তারপরও আমরা তাদের রুম দিতে পারছি না।’

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার বলেন, ‘কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেলে প্রতিদিন পর্যটকের ধারণ ক্ষমতা এক লাখের বেশি। ব্যবসায়ীদের আশা, গত কয়েকদিনের মতো পর্যটক এলে আগামী এক সপ্তাহে পর্যটনখাতে বাণিজ্য হবে কয়েকশ’ কোটি টাকার।’

টুুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সৈকত ও আশপাশের এলাকায় আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে। সেই অনুযায়ী পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে হোটেল-মোটেল জোন, সৈকত, হিমছড়ি, দরিয়ানগর এবং ইনানীতে কয়েক ভাগে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া সাদা পোশাকেও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সৈকতে টুরিস্ট পুলিশের মোটর বাইক এবং বীচ বাইক দিয়ে টহল জোরদার করার পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে