রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বেইলি রোড ট্র‍্যাজিডি: মালয়েশিয়ার যাওয়ার ফ্লাইটে চলে গেলো কবরে

স্টাফ রিপোর্টার কুমিল্লা
  ০১ মার্চ ২০২৪, ১৯:৪৬
বেইলি রোড ট্র‍্যাজিডি: মালয়েশিয়ার যাওয়ার ফ্লাইটে চলে গেলো কবরে

আজ রাতে রিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। আগেরদিন গিয়েছে শপিং করতে ও তাদের এক আন্টির সাথে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে আর ফেরেনি আমার দুই মা। যাবার আগে বলেছিল বাবা আমরা তাড়াতাড়ি ফিরবো। একথা বলে কেঁদে উঠেন কোরবান আলী। তার মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছে।

জানা গেছে, কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের চরবাড়িয়া এলাকার হাজী কোরবান আলীর মেয়ে তারা দুজনে। ফৌজিয়া আফরিন রিয়া মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। আর সাদিয়া আফরিন আলিশা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই ঘটনায় মারা গেছে, রিয়া ও আলিশার খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু। নিমু সদর উপজেলার হাতিগড়া এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। তারা একই সঙ্গে শপিং করতে গিয়েছিল। ফাঁকে কাচ্ছি ভাই রেস্টুরেন্টে খাবার খাবে।

নিহতদের বাবা কোরবান আলী বলেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তারা এলাকায় এসেছিল। সে কয়েকদিন বাড়িতে থেকে চলে গেছে। আজ শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে আমিসহ মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। টিকিটও কেটেছিলা। কিন্তু গত রাতেই সে মারা গেছে। নিমুও তাদের খালাতো বোন। একই সঙ্গে গিয়ে আর ফেরেনি। আবার কাকরাইলের বাসায় থেকে সে পড়াশোনা করতো। আমার ঘর আনন্দে ভরে থাকতো। আজ আমার ঘর শূন্য।

সরেজমিনে চরবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাড়িতে প্রতিবেশিদের ভীড়। সবার চোখে পানি। নারীরা সবাই লাশের গাড়ির আশপাশে ভিড় করেছে। কেউ লাশের গাড়ি ধরেও কাঁদছেন। বাবা কোরবান আলী বাড়ি কাঁদছেন চাচা লোকমান হোসেন। আহাজারি কেন আকাশ ছুয়েছে।

কাঁদতে কাঁদতে কোরবান আলী বলেন, যখন জীবিত মানুষ উদ্ধার শেষ হলো তখন আমার শরীর কাঁপছিল। আমি ঝামাচ্ছিলাম। বুকের ভেতর কেমন জানি হয়েছিল। আমার চোখে পানি আর বুক ভারি হয়ে আসছিল। রাত যখন ১০ টার কাছাকাছি তখন আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেয়া হলো। যে মেয়েকে সন্ধায় ভালোভাবে বিদায় দিয়েছি তার পোড়া লাশ দিয়েছে আমাকে। আমি আমার দুই স্বপ্নের লাশ দিয়ে বাড়ি এসেছি। বিকেলে পুকুর পাশের রেখে আসবো আমার দুই স্বপ্ন।

কোরবান আলী সরকারের অব্যবস্থাপনা উল্লেখ করে বলেন, আমরা যারা ঢাকায় থাকি আমরা সব সময়ই আতঙ্কে থাকি। আমরা কেউ নিরাপদ নই। এক দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই নড়েচড়ে বসে। আবার কদিন পরে আগের মত হয়ে যায়। তারা কেউ তেমন পুড়ে মারা যায়নি। শ্বাসকষ্টে মারা গেছে। তারা বের হতে পারেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু ডিস লাইনের ক্যাবল, ইন্টারনেট ক্যাবল আর বৈদ্যুতিক ক্যাবলের জন্য তাদের গাড়িও ঠিল জায়গায় স্থাপন করে পানি দিতে পারেনি। আর ফলাফল হলো লাশের পর লাশ।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে