শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরার হিড়িক

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ২০:১০
ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরার হিড়িক

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে গত প্রায় ১৫ দিন ধরে শ্যালো মেশিন দিয়ে সরকারিভাবে ইজারাকৃত বিভিন্ন জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরার হিড়িক উঠেছে। এতে করে হাওরাঞ্চলে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন দিনে দিনেই কমে আসছে। আর চলতি বোরো মৌসুমে এভাবে জলমহালগুলো শুকিয়ে মাছ ধরায় হাওর এলাকার কৃষকের বোরো জমিতে সেচ কাজও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই এই সময়ে ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে থাকা জলমহালগুলোর পানি কমে আসার সঙ্গে-সঙ্গে এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি এক একটি জলমহালে ৫-৬টি শ্যালো মেশিন বসিয়ে তা শুকিয়ে মাছ ধরা শুরু করেন।

এ বছরও ফাল্গুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এভাবে জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরার কাজ শুরু করেছেন ওইসব অসাধু ব্যক্তিরা। আর তা চলবে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। জলমহাল ইজারার নীতিমালা অনুযায়ী জলমহালের পানি শুকিয়ে মাছ ধরার কোনো নিয়ম না থাকলেও এখানে গত প্রায় ১৫ দিন ধরে এভাবেই প্রকাশ্যে মাছ ধরার কাজ চলছে।

এতে করে হাওর এলাকার জলমহাল থেকে মিঠা পানির রুই, কাতলা, কালবাউশ, মেনি, পাবদা, আইড়, শোল, গজার, ফলি, চিতল, বাইম, তারা বাইম, ছোট চিংড়ি ও গদলা চিংড়িসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দিনে দিনেই কমে যাচ্ছে।

পাশাপাশি ওইসব জলমহালের চার পাশে থাকা বোরো জমিতে সেচ দেওয়া নিয়েও চরম বেকায়দায় পড়েছেন এলাকার কৃষকেরা। এ সময়ে জলমহালগুলো শুকানোর ফলে হাওরের অনেক কৃষকেই বাধ্য হয়ে তাদের বোরো জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য নিজ-নিজ জমিতে গভীর নলকূপ বসাচ্ছেন।

সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার মেধা বিল, কালিজানা গ্রুপ ফিশার, জলধরা বিল, চট্টনিয়া বিল, শিমূল তলার খাল, গলা ভাঙ্গা-গুল বিল, শ্বাসকার বিল, লুছনির বিল, চাপলার বিল, কেউডির বিল, ইঙ্গার বিল, মুক্তির বিল, ছোট কানিয়া, শৈল চাপড়ার বিল, বন্নির বিল, জয়াধনা, ফাঁসুয়ার জিনাইরিয়া বিলসহ দুই উপজেলার বেশির ভাগ জলমহালই এখন শ্যালো মেশিন দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে।

উপজেলার মেধার বিল এলাকার কৃষক আলি নুর, আবুল কালাম, কাসেম মিয়াসহস অনেক কৃষকই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাপ-দাদার আমল থ্যাইক্যাই আমরা এই মেধা বিলের পানি দিয়া আমাদের বোরো জমি আবাদ কইরা আইতাছি।

এহন কয়েক বছর ধইরা এলাকার প্রভাবশালী লোকেরা এই বিল ইজারায় আইন্যা তারা মেশিন দিয়া শুকাইয়্যা মাছ ধরার কারণে আমাদেরকে এহন বোরো জমিতে ডিপ মেশিন বসাইয়্যা পানি দিতে হয়।

বুধবার বিকেলে উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মেধা ১ বিল নামক জলমহালটি শ্যালো মেশিন দিয়ে শুকিয়ে লোকজন নিয়ে মাছ ধরারত আবস্থায় পাওয়া যায় ওই জলমহালের ইজারাদারের লোকজন। এ সময় তাদের এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হলে তিনি এক পর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে বলেন, আপনি আমাদেরকে এত প্রশ্ন করছেন কেন? আমরা জলমহাল শুকাইনি। শ্যালো মেশিন দিয়ে জলমহাল শুকাইছে ইজারাদার । আমরা শুধু মাছ ধরছি। আর এতে আমাদের কোনো দোষ নেই।

ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় ২০ একর আয়তনের ঊর্ধ্বে ৬৮টি ও ২০ একরের নিচে ৪৫ টি জলমহাল রয়েছে।

এ ব্যাপারে ধর্মপাশা উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন জল মহলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করেছি। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ ব্যাপারে মধ্যনগর উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, শ্যালো মেশিন দিয়ে জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। জলমহাল শুকিয়ে যারা মাছ ধরছে তাদেরকে কোনো ছাড় দেওয়া হবেনা।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে