শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

কর্ণফুলী নদী পারাপারে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:২৩
সংস্কার না হওয়ায় কর্ণফুলী জুলধা ডাঙ্গারচর ঘাটের বেহালদশা। ছবি: যায়যায়দিন

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার আওতাধিন কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটে বাড়তি ভাড়া আদায় ও খাস কালেকশন নিয়ে স্থানীয় লোকজন, নৌকার মাঝি, যাত্রী ও ইজারাদারদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধিন এসব ঘাটের ইজারাদাররা নিয়মনীতি না মেনে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করছে বলে জানা গেছে।

ইজারাদার বা খাস কালেকশন আদায়কারী ও নৌকার মাঝিদের সাথে সৃষ্ট এ ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে বৈঠকে বসেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি বছর হাইকোর্টের আদেশে চসিকের ঘাট ইজারা স্থগিত হওয়ায় এসব ঘাটে খাস কালেকসন চলছে। প্রতিদিন এসব ঘাট দিয়ে লক্ষাধিক মানুষ ঘাট পারাপার হয়।

জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার কোল ঘেসে নদী পর হয়ে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতের জন্য ২০ টি ঘাট রয়েছে। ঘাটগুলো হলো পতেঙ্গা ১৫নং ঘাট, সল্টগোলা ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, নয়ারাস্তা পাকা পুল ঘাট, সদরঘাট, ফিসারীঘাট,নতুনঘাট, এয়াকুব নগর লইট্যা ঘাট, পতেঙ্গা ১৪নং ঘাট, গুচ্ছ গ্রাম ঘাট, ১১নং মাতব্বর ঘাট, ১২নং তিনটিংগা ঘাট, ৭নং রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন ঘাট, ৯নং বি ও সি ঘাট, অভয়মিত্র ঘাট,চাক্তাই খালের পাশে পান ঘাট হতে গাইজ্জের ঘাট, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাট, বাকলিয়া ক্ষেতচর ঘাট, চাক্তাই ঘাট ও চাক্তাই ৫টি লবণঘাট। এসব ঘাটের ইজারা দেয় সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু ঘাটের কোন সংস্কার কাজ না হওয়ায় যাত্রীদের উঠানামায় বিভিন্ন সময় ঘটে দুর্ঘটনাও।

এবছর হাইকোর্টে মামলা দায়ের করায় চলতি বছর সিটি কর্পোরেশন নতুন করে ইজারা দিতে পারেনি তাই এখন খাস কালেকশন চলছে এসব ঘাটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌকার মাঝিরা জানান সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে অর্থের বিনিমিয়ে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে খাস কালেকশনের দায়িত্ব দেওয়ায় এসব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন প্রজ্ঞাপনে সল্টগোলা ঘাটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি যাত্রীর ভাড়া (যন্ত্রচালিত লাইফ বোটে) ১০ টাকা, রিজার্ভ ভাড়া ২২০ টাকা, আরোহীসহ ব্যক্তি গাড়ি ৪ টাকা, গরু বা মহিষ প্রতিটি ৪ টাকা, ভেঁড়া-ছাগল-কুকুর বা অন্যান্য জন্তু ১ টাকা ও প্রতি মণ বোঝা বা ইহার কম ভাড়া ৫০ পয়সা। এভাবে অন্যান্য ঘাটেও বাড়া নির্ধারন রয়েছে। কিন্তু চসিকের এই ভাড়ার তালিকা কোন ঘাটে টাঙানো হয়নি। এই সুযোগে ইজারাদার বা খাস কালেকশনকারীরা দ্বিগুন পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছে। এতে করে ঘাটে স্থানীয় লোকজন ও খাস কালেকশন আদায়কারীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। গত ১৫ এপ্রিল আবসার উদ্দিন নামে একব্যক্তি জুলধা ডাঙ্গারচর ঘাটে খাস কালেকশন করতে আসলে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, এসময় ঘাটে যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যায় পরে কর্ণফুলী থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ঘাট পারাপারের যাত্রী আবদুস সালাম ঈদকে কেন্দ্র করে ১০ টাকার ভাড়া এখনো ২০ টাকা নিচ্ছে, দেখার কেউ নেই।

সল্টগোলা ডাঙ্গারচর পাটনীজীবি সমবায় সাধারণ সম্পাদক সভাপতি মনির আহমদ বলেন, আমরা ৪০-৫০ জন মাঝি এখানে আছি, খাস কালেকশনের নামে ইজারাদাররা ইচ্ছামত টাকা আদায় করে নিয়ে নেয়, কিন্তু ঘাটের কোন সমস্যা তারা সমাধান করেনা।

জানতে চাইলে পতেঙ্গা ১৫নং, ১৪ নং ও ১১নং মাতব্বর ঘাটের ইজারাদার আবদুল শুক্কুর বাড়তি ভাড়া আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। ভাড়ার তালিকা ঘাটে টাঙানো না হলেও আমার অফিসে আছে।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে