মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
ফরিদপুরের পঞ্চপল্লী

বেপরোয়া চেয়ারম্যান তপন, নিহত দুই শ্রমিকের পিতার দাবি চাঁদা না দেওয়ায় পিটিয়ে হত্যা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
  ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৩
বেপরোয়া চেয়ারম্যান তপন, নিহত দুই শ্রমিকের পিতার দাবি চাঁদা না দেওয়ায় পিটিয়ে হত্যা

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে প্রতিমায় আগুন, দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় স্থানীয় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো: আসাদুজ্জামান তপন। আগে থেকেই নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন এই চেয়ারম্যান। নিহত দুই শ্রমিকের পিতার দাবি চাঁদা না দেওয়াতেই হত্যা করা হয় তার দুই সন্তানকে।

দখল, চাঁদাবাজিতে আগে থেকেই উঠে এসেছিল ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো: আসাদুজ্জামান তপনের নাম। এলাকায় নিজস্ব বাহিনী দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিয়ন্ত্রণ। তার দখলবাজিতে কেউ প্রতিবাদ করলেই চালাতেন নির্যাতন। অনেকে তার নির্যাতনে এলাকাছাড়া হয়েছেন।

সালিশ বাণিজ্য করেও টাকা আয় করতেন এই চেয়ারম্যান। ২০২৩ সালের ৪ঠা মে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাধা ও ইউএনওকে মারধর করে হন বরখাস্ত। তবে উচ্চ আদালতের আদেশে পরে পদে ফিরেন। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের নানা প্রকল্প বাস্তবায়নেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।

গত ১৮ এপ্রিল পঞ্চপল্লীতে শ্রমিকদের মারধরের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান তপন এমন অভিযোগ করেছেন নিহত দুই সহোদরের পিতা শাহজাহান খান।

তিনি বলেন, ঘটনার কয়েকদিন আগে আমার ছেলে আমাকে মোবাইলে জানিয়েছিল সেখানে ঝামেলা হয়েছে। স্থানীয় মেম্বার চাঁদা চেয়েছিল, এনিয়ে তাদের সাথে বাক বিতন্ডা হয়। এরপরই ঘটে হামলার ঘটনা।

শাহজাহান খান বলেন, প্রথমে আমার ছেলেকে মারপিট শুরু করেন চেয়ারম্যান তপন। এরপর অজিত মেম্বার সহ সবাই তাদের মারপিট করে। চাঁদা না দেওয়াতেই আমার সন্তানদের পিটিয়ে হত্যা করে। আমরা ভিডিওতে দেখেছি তপন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই এ হামলা চালানো হয়। এখন পর্যন্ত তপন চেয়ারম্যান ও অজিত মেম্বারকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্ঠান্তমূলক বিচারের দাবী জানাই।

চোপেরঘাট গ্রামের বাসিন্দা রিজিয়া বেগম বলেন, আমাদের দুই সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অজিত মেম্বার সহ স্থানীয়রা হামলা চালায়। তপন চেয়ারম্যান এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে গেছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম বলেন, এর আগে আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্মানকাজের বাধা দেন তিনি। এনিয়ে চেয়ারম্যান সহ তার লোকজন ইউএনও’র উপর হামলাও চালান। ওই মামলায় তিনি গ্রেফতারও হন। পরে জামিনে বের হয়ে এসে পুনরায় স্বমহিমায় ফেরেন তিনি।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, এলাকায় তপন চেয়ারম্যানের নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। বিভিন্ন অপকর্ম করলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেনা। দখল, চাঁদাবাজী সহ নানা অপকর্ম তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও বিকাশ প্রতারক চক্রের হোতা তিনি। প্রতারক চক্রের কোনো সদস্য সমস্যায় পড়লে তাতক্ষনিকভাবে তিনি তাদের পাশে দাড়িয়ে বাঁচিয়ে নেন। এখান থেকেও বিপুল অংকের অর্থ আসে তার কাছে।

গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি মন্দিরের প্রতীমায় আগুনের খবর পেয়ে জড়ো হন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় পঞ্চপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণে কাজ করা ৭ শ্রমিককে সন্দেহ করেন তারা।

পরে স্কুলে গিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর দেয়া হয়। এতে গুরুতর আহত হলেও শ্রেণিকক্ষে আটকে রাখা হয়। প্রথমে থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন।

পরে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের অতিরিক্ত সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আশরাফুল ও এরশাদুল নামে দুই ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহত আশরাফুল ও এরশাদুল মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে।

গত ২১ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৫ ও ৪৩ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে স্কুলের কক্ষে মেঝেতে ফেলে পিটানো হচ্ছে। এ সময় ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্ মো: আসাদুজ্জামান তপন ও ইউপি সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাস মারপিট করছিলেন দেখা যায়।

এদিকে ওই ভিডিও প্রকাশের পর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ও মেম্বার অজিত বিশ^াস গা ঢাকা দিয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবী দ্রুত ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে গ্রেফতার করা হোক।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে আসেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল। হত্যাকান্ডে জড়িত চেয়ারম্যান ও মেম্বারের গ্রেফতারের দাবী জানান তিনিও। তিনি বলেন, হামলার সময়ের ভিডিওতে দেখা গেছে চেয়ারম্যান ও মেম্বার সহ স্থানীয়রা হামলা চালিয়েছে। তারা সহ জড়িত অন্যদেরও দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানাই।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, হামলার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বার সহ জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো: কামরুল আহসান তালুকদার জানান, এঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে