শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শিবচরে তীব্র তাপদাহে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া

এস.এম. দেলোয়ার হোসাইন, শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
  ০৫ মে ২০২৪, ১৫:১৫
শিবচরে তীব্র তাপদাহে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া

তীব্র গরমে নাজেহাল জনজীবন। কোথায় গেলে দুদণ্ড শান্তি মিলবে, সেই খোঁজ করে চলেছেন সবাই। ফ্রিজের ঠান্ডা পানিতে গলা ভিজিয়ে আর এসির হাওয়া গায়ে লাগিয়ে খানিকটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে বটে, তবে গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে চোখ জুড়ানো আর মন ভরানো স্বস্তি মিলছে পথের কিনারে ফুটে থাকা লাল-হলুদ ফুলে। কাঠফাটা রৌদ্রের তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করেই বসন্তের রক্তিম রেশ ধরে রেখেছে গ্রীষ্মের চোখধাঁধানো লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া।

গাছে-গাছে বর্ণিল সব ফুলের সমারোহ। কোথাও টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া, কোথাও কমলা রঙের রাধাচূড়া। কোথাও আবার ছেয়ে আছে স্নিগ্ধ বেগুনি রঙের জারুল। পথ চলতে থমকে দাঁড়িয়ে এসব ফুলের দিকে কিছুক্ষণ চাননি, এমন মানুষ পাওয়া ভার হবে নিশ্চয়ই। আর মিষ্টি হলুদ রঙের সোনাঝরা সোনালুর ঝলমলে চাহনি গ্রীষ্মের রূপে যোগ করে দ্বিগুণ মাত্রা।

সারা দেশের মতো শিবচরে পথে-প্রান্তরে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি। তাই প্রকৃতিতে যেন এখন কৃষ্ণচূড়ার সুদিন বইছে। এ সুদিনের সুবাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ফুল ও প্রকৃতি প্রেমি মানুষের হৃদয়।

সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এ দু‌ই মাস নিয়েই গ্রীষ্মকাল। আর গ্রীষ্মের ফুলের কথা বলতেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার কথা। সুমিষ্ট রসাল ফলের জন্য গ্রীষ্মকাল এগিয়ে রয়েছে, তবে ফুলের দিক থেকেও অন্যসব ঋতুর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে গ্রীষ্মকাল। তাই ফুল উৎসবের ঋতু বলা যায় গ্রীষ্মকালকেই। এ মৌসুমে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙের যে উম্মাদনা, তা এতই আবেদনময়ী যে চোখ ফেরানো অসম্ভব।

রোববার (০৫মে) দুপুরে শিবচর-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের দুপাশে, পাঁচ্চর-শিবচর সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলেছে কৃষ্ণচূড়ার। প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্যের ছবি তুলছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার অনেক গাছ থেকে একমুঠো ফুল বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

কলেজ শিক্ষার্থী নুপুর আক্তার মারিয়া একজন ফুলপ্রেমি মানুষ। যায়যায়দিনকে তিনি জানান, যখন কৃষ্ণচূড়া ফৌটে তখন গাছ-গাছালি লাল-সবুজ রঙে যেন মুখর হয়ে উঠে। আর এ সময়টা আমার কাছে ভালো লাগে অন্যরকমভাবে। এ ভালো লাগার কথা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না।

আরেক কলেজ শিক্ষার্থী তাসনোভা তুশিনও কৃষ্ণচূড়ার প্রেমি। তিনি বলেন, প্রতিবছর নয়, প্রতিটি দিনই যেন অপেক্ষায় গ্রীষ্মের এই দিনগুলোর জন্য। কৃষ্ণচূড়ার রঙে প্রকৃতি যেন এক অপূর্ব সুন্দরে সাজে। প্রতিদিন এ দৃশ্য না দেখলে মনে হয় জীবনটাই বৃথা।

কবি তামিম ইসমাইল বলেন, আমি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়াকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আমি তাকে নিয়ে বই লিখি।গ্রীষ্মের এই খরতাপে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো। রক্তিম লালে প্রকৃতিকে ও যেন অনেক অপরূপ দেখায়।

সহকারী শিক্ষক লিটন খান বলেন, বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে দিন দিন কমে যাচ্ছে শিবচর থেকে রঙিন এই গাছ। একসময় এ গাছ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমীদের।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “দেশ” এর সভাপতি ওয়াহীদুজ্জামান জানান, গ্রীষ্মকালে যখন কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে, তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে গিয়ে তাকাতে বাধ্য হয়। কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়ে থাকে লাল, হলুদ ও সাদা । আমাদের দেশে লাল ও হলুদ বর্নের কৃষ্ণচূড়া ফুল সচরাচর চোখে পড়ে। এ গাছগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই বৃক্ষপ্রেমীদের প্রতি ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বেশি বেশি করে এ কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে