নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে সেতু নির্মাণ করলেও তা কাজে আসছে না। নির্মাণের বছরখানেকের মধ্যে বন্যায় ভেঙে যায় সেতু। চার বছর পরও ভাঙা সেতু মেরামত হয়নি। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের।
অভিযোগ রয়েছে, অনিয়মের মধ্য দিয়ে সেতু তৈরির ফলে নির্মাণের বছরখানেকের মধ্যে বন্যায় ভেঙে পড়ে। এরপর বছরের পর বছর গেলেও সেতুটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করেনি কেউ।
সূত্র জানায়, কাকৈরগড়া ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার ১০৬ টাকা ব্যয়ে গোদারিয়া হইতে জয়নগর বাজার সড়কের গাঁওয়া খালের ওপর কালভার্ট/সেতুটি নির্মিত করা হয়েছিল।
সরেজমিন দেখা যায়, সেতুটির পাশের মাটি সরে মাঝ বরাবর ডেবে পড়ে রয়েছে। সেতুর পাশ দিয়ে হেঁটে চলাচল করছেন লোকজন। কেউবা আশপাশের বাড়ির উঠানের ভিতর দিয়েই চলাচল করছে।
কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, হাট বাজারে বা উপজেলা শহরে যেতে হলে প্রায় আট কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হয়। এতে তাঁদের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এখন তাঁরা এ পথ দিয়ে কষ্টে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারলেও পানি হলে চলাচল করা সম্ভব হয়না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে সেতুটির নিচ থেকে মাটি সড়ে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সেতুটি ডেবে গিয়ে সড়কের সংযোগ অংশটি বিছিন্ন হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও পুনরায় সেতুটি টিক না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পূর্বকান্দা, সাংসা, মাদুরপাড়, জয়নগর, রামপুর,পূর্ববিলাশপুর, শালুয়াকান্দা, গাঁওয়ার পাড়, গোদারিয়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষকে। ওইসব গ্রামের বাসিন্দারা বেশির ভাগ কৃষক। তাই তাদের কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক , বীজ, ডিজেল, কোরোসিন সেচযন্ত্র ও নিত্য ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র এ পথে আনা- নেওয়া করা হয়।
অন্যদিকে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের জন্য এ পথেই হাট-বাজারে নেওয়া হয়। তাছাড়া এই পথে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফলে শিক্ষার্থীদের যেতে কষ্ট পোহাতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে কষ্ট করে চললেও পানির সময়ে এই দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে যায়। তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য ভেঙে পড়া সেতুটি পুনরায় তৈরির জন্য স্থানীয় সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দাবি জানান তাঁরা।
রামপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, অনেক কষ্ট করে এখন চলাচল করতে হয় আমাদের। রাস্তাও ভালো না আবার সেতুটি ভাঙা থাকার কারণে বিভিন্ন প্রয়োজনে হাট-বাজার বা শহরে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তাই সেতুটি নতুন করে নির্মাণের দাবি তাঁর।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই বলেন, রাস্তার জন্য অনেক আগে থেকেই কষ্ট করে আসতেছি আমরা। আমাদের অনেক আশায় এই ব্রিজটা হয়েছিল কিন্তু এক বছরও টিকে নাই ভেঙে গেছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় যে ১ মন ধান বিক্রি করে আর কত টাকা পায় আমরা? আমাদের ধান বাজারে নিয়ে যেতে ১০০ টাকা ভাড়া বেশি গুনতে হয়। সেতুর জন্য যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেটি ভাষায় বর্ণনা করার মতো না।
রাজিব মিয়া বলেন, সব মাটি খুদে নিছিন গা। তারাও ব্রিজের কাজ দুর্বল করছে। এ-ই লাইগাই ব্রিজডা ভাঙছে। মানুষজন কষ্ট কইরা চলাফেরা করে বাচ্চারা কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যাওয়া লাগে আরও ধান বন লইয়াও কষ্ট করা লাগে রাস্তাঘাট কিছুই ভালো না আমরার।
রেনু মিয়া বলেন, ব্রিজ পেয়ে এলাকাবাসী খুশি হয়েছিলো কিন্তু সেই খুশি আর বেশিদিন থাকেনি। বর্তমানে মানুষের বাড়ির ভিতর দিয়ে চলাফেরা করে সবাই। নিষেধ করলেও আমাদের অপমানিত হতে হয়।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ছেলেমেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একটা অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসার জন্য গাড়ি দিয়ে শহরে নেওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই আবারও সেতু নির্মাণ করা হলে আর ভোগান্তি থাকবে না।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি লাল চাঁন তালুকদার বলেন, প্রতিদিন প্রায় আট কিলোমিটার পথ ঘুরে কলেজে যেতে হচ্ছে। সেতুটি দ্রুত করা হলে এলাকাবাসীর অনেক উপকার হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সেকুল তালুকদার বলেন, সেতুটির জন্য মানুষের অনেক বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। আমি কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। সেতুটির বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে আমি খোঁজ নেব।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান বলেন, সেতুটির বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাযাদি/ এসএম