মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

বরিশালে মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন, ১৬ জন গুলিবিদ্ধসহ নিহত ২  

বরিশাল অফিস
  ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১৯:০৩
ছবি-যায়যায়দিন

বরিশালে কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আওয়ামীলীগ-পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখি সংঘর্ঘ হয়। সংঘর্ষে এক আওয়ামীলীগ নেতা নিহত ও ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশত। আন্দোলনকারীরা বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্যর বাড়িতে ও সেখানে থাকা প্রায় ৫০ টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেছে। বেলা ১১ টা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ১ টার দিকে সংঘর্ষে রুপ নেয়। থেমে থেমে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চলে এ সংঘর্ষ।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার (০৪ আগষ্ট) বেলা ১১ টার দিকে বরিশাল বিএম কলেজের সামনে একত্রিত হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে তারা নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

পরে বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় জড়ো হয়। তাদের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাসহ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। এসময় বরিশালের সাথে উত্তর ও দক্ষিনের সকল জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

বেলা ১২ টার দিকে আন্দোলনকারীরা চৌমাথার কাছাকাছি করিম কুটির মসজিদ সংলগ্ন বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীমের বাসায় অগ্নিসংযোগ করে। তখন সেখানে রাস্তার উপরে থাকা প্রায় অর্ধশত মটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।

সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি মঈন তুষার জানান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের বাসভবনে আকস্মিক হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ সময় ওই এলাকায় যাকে পেয়েছে তাকে হামলাকারীরা মারধর করেছে এবং মন্ত্রীর বাসাসহ আশপাশের বাসায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। এদিকে প্রতক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকশ যুবক আকস্মিক মন্ত্রীর বাসার সামনে হামলা চালায়। এসময় তারা মন্ত্রীর বাসার সামনে থাকা সকল ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আর গোটা নবগ্রাম রোডের ডিভাইডারে থাকা পাইপ উঠিয়ে তা দিয়ে সাধারণ মানুষ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেয় হামলাকারীরা।

এতে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় যে ছবি তুলতে গেছে তাকেই মারধর করেছে এবং হাতে থাকা মোবাইল ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা। আর হামলার সময় মন্ত্রীর বাসার আশপাশে কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী না থাকায় সব কিছু নির্বিঘেœ ঘটে যায়।

পরে দুপুর ১ টার দিকে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা নগরীর বটতলা এলাকা থেকে একত্রিত হয়ে চৌমাথার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে পথিমধ্যে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি হয়। এসময় আন্দোলনকারী, পুলিশ ও আওয়ামীলীগ ত্রিমুখি সংঘর্ষ বাধে।

সংঘর্ষে পুলিশ ও আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে গুলি ছোড়ার অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। গুলিতে ১৬ জন আহত হয়ে শেরই-বাংলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সংঘর্ষে আন্দোলনকারী ও আওয়ামীলীগের ৫০ জনারও বেশি আহত হয়েছেন। এসময় আন্দোলনকারীদের দায়ের কোপে ও লাঠির আঘাতে বরিশাল নগরীর ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন।

হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাধারণ সম্পাদক ডা. এ এস এম সায়েম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিহত টুটুলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আর আঘাতগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যে মাথার খুলির ভেতরে থাকা অনেক কিছুই বাইরে বের হয়ে গেছে।

এরপরও ওই একই এলাকায় কয়েক দফায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দুই জন কিশোর রয়েছে। হাসপাতালের দেয়া তথ্যমতে গুলিবিদ্ধরা হলেন, মাসুম বিল্লাহ, আল অমিন, সাব্বির, রাখি, ইমরান, মনির হোসেন, রোহান, ইমরান, সাইদুল, আকাশ, হেলাল, রুহুল অমিন, আব্দুর রহমান, সাব্বির, রিয়াজ ও মাহফুজ।

এদিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছাত্রলীগ সকাল থেকেই নগরীর সদর রোডে অবস্থান নেয়। এসময় সহিংসতা প্রতিরোধে তাদের হাতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা দেখা গেছে।

মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিকাল ৫ টার পর অন্দোলনকারীরা চৌমাথা এলাকা ছেড়ে পিছু হটে নবগ্রাম রোডের দিকে চলে গেছে। অন্যদিকে সংঘর্ষে একজন নিহত ও হাসপাতালের বড়াতে ১৬ জন গুলিবিদ্ধর কথা স্বীকার করলেও আহতর সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে