রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সাতরাস্তা এলাকায় ছয় দফা দাবিতে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে ঢাকা পলিটেকনিক ও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব গ্লাস এন্ড সিরামিকের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন।
সোমবার ( ৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন বলে জানান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী শামীমুর রহমান।
ওসি গাজী শামীমুর রহমান বলেন, অবরোধের কারণে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যাঁরা অবরোধ করেছেন, তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের ৬ দফা প্রসঙ্গে জানা যায়, ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত সব ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের কারিগরি অধিদপ্তর এবং সব প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত স্থানান্তর করতে হবে।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতি সেমিস্টার (পর্ব) পূর্ণ মেয়াদের (ছয় মাস) করতে হবে। উপসহকারী প্রকৌশলী পদে (১০ম গ্রেড) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্য কেউ আবেদন করতে পারবেন না এবং উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান পদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে।
এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংস্কার করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত কোনো জনবল থাকতে পারবে না। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে সব শূন্য পদে কারিগরি জনবল নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষকসংকট দূর করতে হবে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ সিট নিশ্চিত করতে হবে এসব তাঁদের দাবিতে রয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও জানান, সরকারি বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মনোটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজগুলো মাত্র আঠারো শতাংশ শিক্ষক দ্বারা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। চলমান এই শিক্ষক সংকট নিরসনে বিপিএসসি গত ২৬/১০/২০২১ইং স্মারক নং- ৮০.০০.০০০০.১০৯.১১.০০৬.২১ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। দ্রুত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ১৮/০৩/২০২৩ইং তারিখে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনটি ধাপে ০৪/০২/২০২৪ ইং তারিখ হতে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়ে ২৭/০৫/২০২৪ ইং তারিখে সকল পদের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে।
উল্লেখ্য যে, মৌখিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ১৩ ও ১৫ তম গ্রেডভুক্ত ক্রাফ্ট ইন্সট্রাক্টরগণ মহামান্য আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন, যেখানে তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১০ম গ্রেড জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দাবি করে যা ২০২০ সালের প্রজ্ঞাপনের ক্যাডার নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালার সাথে সাংঘর্ষিক।
হাইকোর্ট মামলায় রুল ইস্যু না করে বাদীগণের দায়েরকৃত আবেদন (এনেক্স-আই) ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আদেশ প্রদান করেন।
তৎপ্রেক্ষিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড ও নন গেজেটেড (কর্মকর্তা-কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ মোতাবেক ১৩ ও ১৫ তম গ্রেডভুক্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর (সপ/টিআর) পদ হতে ১০ম গ্রেডভুক্ত জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/নন-টেক) পদে পদোন্নতির সুযোগ নেই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদনটি নিষ্পত্তি করেন।
তা সত্ত্বেও ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরগং মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে পুনরায় রিট পিটিশন দায়ের করতে থাকলে কারিগরির শিক্ষক নিয়োগের সকল ধাপ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও অবৈধ মামলার কারণে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশে অনাকাঙ্খিত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। যার ফলে কারিগরির শিক্ষক স্বল্পতার দ্রুত নিরসন সম্ভব হচ্ছে না।
তাই শিক্ষক সংকট নিরসনে ২০২১ সালে অবৈধভাবে নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের সকল ষড়যন্ত্রের বিরোদ্ধে ছাত্রদের এই আন্দোলন।
যাযাদি/ এম