বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোঃ আব্দুল কাদের বলেছেন, “পাশের রাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে ন্যায্যতার ও সমতার। তবে কোনো ধরণের নতজানু সম্পর্ক হবেনা।
তিনি গত বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্ত মঞ্চে গণঅভ্যুথানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাত এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
এ সময় সমন্বয়ক মোঃ আব্দুল কাদের আরো বলেন, ‘হাসিনাকে হটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়েছি। কিন্তু তার ম্যাকানিজম এখনো আছে। তার সাঙ্গপাঙ্গরা এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যে লঙ্কায় যায় সেই বারণ হয়- আমরা এটা দূর করতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, জুলাইয়ের বিপ্লব ছিলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে, কোটা সংস্কারের পক্ষে। সে সময় এদেশের ছাত্র-জনতা একটি শান্তিপূর্ন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলো। তখন ফ্যাসিবাদি সরকার দাবি গুলোকে তোয়াক্কা না করে হাইকোর্টের মাধ্যমে আন্দোলনকে নির্বিকার বলে বাতিল করেছিলো। তাছাড়া শেখ হাসিনার বিতর্কিত মন্তব্য “ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি না দিয়ে রাজাকারের ছেলে-মেয়েদের চাকরি দিবে কি না” এই বক্তব্যের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে ছাত্র-জনতা। তার দুদিন পর ১৫ জুলাই ছাত্র-জনতার উপর হামলা করা হয় এবং ১৬ তারিখ আবু সাঈদ সহ ৬ জন সংগ্রামী ছাত্র শহীদ হয়েছে। ছয়টি তাজা রক্ত ঝরে পড়ার পর এটি শুধু কোটা আন্দোলন ছিলো না। ছয়টি লাশের বিনিময় কোটা আন্দোলন হতে পারে না। তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যার নির্দেশে এই রক্ত ঝড়ানো হয় তাকে পতন না করানো পর্যন্ত ছাত্র জনতা রাজপথ ছাড়বে না। আর তাই হয়েছে।
আব্দুল কাদের এ সময় বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে তাদেরকে জানানো হয়েছে গণ অভ্যুথানে শহীদদের প্রত্যেকের পরিবারে একটি করে চাকরি দেয়া হবে। ফাউন্ডেশন গঠন প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেই ফাউন্ডেশন থেকে নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
সমন্বয়ক হামযা মাহমুদের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আলী আহমেদ আরাফ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক জিয়া উদ্দিন আয়ান, নিহতদের পরিবারের পক্ষে সাইদুর রহমান, শাহজাহান মোল্লা, ইসরাত জাহান প্রমুখ।
জিয়া উদ্দিন আয়ান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আর মাথা নত নয়, ভারতের কাছে। এটা ছাত্রদের প্রতিনিধির সরকার। আস্থা রাখতে হবে এ সরকারের প্রতি। আগে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর আগে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
এ সময় বক্তারা আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে গর্তেই লুকিয়ে থাকুক না কেন তাকে বের করে এনে ফাঁসি দিতে হবে। এজন্য সরকারকে চাপ দিতে হবে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তাদেরকে চাপে রাখতে হবে। প্রয়োজনে আবার আন্দোলনে নামতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, ‘আন্দোলনের সময় সারাদেশে পুলিশ নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। এই পুলিশকে ঢেলে সাজাতে হবে। এমনভাবে সাজাতে হবে যেন গুলি করা তো দূরের কথা কোনো পুলিশ যেন চোখ রাঙিয়ে কথা বলতে না পারে।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিহত তানজিন মাহমুদ সুজনের বোন ইসরাত জাহান বলেন, ‘পুলিশ নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। আমার ভাইসহ ছয়জনকে হত্যার পর পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে লাশ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় যেন চেনা না যায়। সাথে থাকা স্কুলের আইডি দেখে ভাইকে চিহ্নিত করা হয়। আমি আমার ভাইসহ সকল শহীদের বিচার দাবি করছি।
যাযাদি/ এসএম