আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন থানায় একের পর এক মামলা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে করা হচ্ছে আসামি। কিন্তু আসামির তালিকা থেকে বাদ যাননি যুবদলের কর্মীও। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৭ মাস কারাভোগ ও ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের শিকার যুবদলের কর্মী রুহুল আমিনকে ছাত্রলীগ কর্মী সাজিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।
আসামির তালিকায় নিজের নাম দেখে যুবদল কর্মী রুহুল আমিন বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়ার তত্ত্বাবধানে মামলাগুলো করা হচ্ছে। মোটা অংকের টাকায় তারা মামলা বাণিজ্য করছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় গত সোমবার কিশোরগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন লতিবাবাদ উত্তরপাড়া গ্রামের শিক্ষানবিশ আইনজীবী সুজন মিয়া। মামলায় ৯০ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০০/২৫০ জনকে আসামি করা হয়। যুবদল কর্মী রুহুল আমিন এই মামলার ৩৬ নম্বর আসামি।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমি দেখে দেওয়ার পরও ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কাউকে কাউকে আসামি করা হচ্ছে এবং কিছু নিরীহ মানুষকেও আসামী করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো ওসি সাহেবকে বলেছি চার্জশিট থেকে যেন তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।
মামলার ৩৬ নং আসামী রুহুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাবেক সরকারের আমলে হয়রানীর চাপ এখনও তাদের পরিবার থেকে যায়নি। এলোমেলো অবস্থায় অগোছালো পরিবারটি স্বাধীনতার মিছিলটি শেষ করতে না করতেই ৯ সেপ্টেম্বরের মামলায় আবার আতংক তৈরী হয়েছে। রুহুলের ছেলে সাংবাদিক বাসায় যেতেই বলে বাবা বাসায় নেই। বাবাকে আর ধর না। অনেক জেল খেটেছে। আমরা খাইতে পাই না বাবাকে দেখতে পাই না। অনেকদিন পরে আমরা বাবাকে নিয়ে ঘুমাইছিলাম। আবার কি হাসিনা এসে গেছে ? তার পিছন দিয়ে শিশু কন্যাটিও কান্না শুরু করে। তার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করলে আমার স্বামীর অপরাধ কি। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়াটা কি আমার অপরাধ। এক অত্যাচার শেষ হতে না হতেই আরেক অত্যাচারের মুখে আমরা। ৫ আগস্ট ভেবেছিলাম সুন্দর করে ঘর ঘুছাবো। কিন্তু কে বা কার কারণে বিএনপি করা মামলাতেও আমাদেরকে হয়রানি পোহাতে হবে জানা ছিল না। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক। একমাত্র স্বামীর উপার্জনে আমাদের পরিবার চলে। দীর্ঘ ১৭ মাস জেল খাটার সময় কিভাবে দিন কেটেছে রাত হয়েছে সপ্তাহ গিয়েছে বা বছর গিয়েছে বুঝতে পারিনি। কখন রিমান্ড ফেরাবো কখন জেলখানার নির্যাতন থেকে স্বামীকে নিষ্কৃতি দিব তা নিয়ে ছিল আতংক। কখনও মনে হত জেলখানা থেকে কি আমার স্বামীর লাশ আনতে হয়। একদিন রাতে খবর পাই জেলখানায় এক লোক মারা গেছে। সারারাত জেলখানার সামনে দাঁড়িয়ে রাত পার করি। সকালে দেখি অন্য লোক মারা গেছে। বাড়িতে ফিরে এসে বাচ্চাদের খাবার দেই তখনও খবর আসে রিমান্ডের এই ছিল আমার জীবন। আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার কাছে বর্তমানের বর্বরতার বিচার চাই। পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে নিঃশেষ করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক মহল কাজ করছে। এর সঠিক বিচার চাই।