শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

অ্যাসিডে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা, দূষণে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধ
  ০২ মার্চ ২০২৫, ১৫:১৭
অ্যাসিডে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা, দূষণে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
ছবি: যায়যায়দিন

বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর পাড়ে সিসা কারখানায় ব্যাটারি পোড়ানোর অ্যাসিডের ধোঁয়া ও গন্ধে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের জামথল মাদারগঞ্জ ঘাট বেড়া পাচবাড়িয়া পাকার মাথার কাছে কারখানাটির অবস্থান। এই কারখানার ব্যাটারি পুড়িয়ে অ্যাসিড গলানোর কাজ করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজলা এলাকার মহিদুল ইসলাম নামে বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতা এই কারখানার মালিক।

স্থানীয় বাসিন্দা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, মাদারগঞ্জ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী চলাচল করেন। দিনে অ্যাসিড আর রাতে ধোঁয়ার গন্ধ এলাকাবাসীর জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। কারখানাটির পশ্চিম পাশে যমুনা নদী ও মাদারগঞ্জ ফেরিঘাট। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ নদী পারাপার হয়। এ ছাড়া কারখানাটির পুর্ব পাশে বসতবাড়ি ও আশ্রয় প্রকল্পের বসতবাড়ি। উওর দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্হিত।

সরেজমিনে দেখা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রহীন কারখানাটি থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা পুরোনো ব্যাটারি ও সিসাভর্তি একটি ট্রাক কারখানার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। সেই ট্রাক থেকে কারখানার শ্রমিকদের কেউ কেউ এসব ব্যাটারিসহ সিসা কারখানার ভেতর নিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন শ্রমিক কারখানার ভেতরে কাজ করছেন। কেউ পুরোনো ব্যাটারির ওপরের অংশ খুলে প্লেট (ব্যাটারির ভেতর থাকা পাত) বের করছেন। কেউ ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করে সংরক্ষণ করছেন।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারখানাটিতে দিনের বেলায় পুরোনো ব্যাটারি থেকে প্লেট খোলা ও অ্যাসিড সংরক্ষণের কাজ করা হয়। আর রাত ১০টার পর প্লেটসহ আনুষঙ্গিক জিনিস পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে পুরোনো ব্যাটারি কিনে এনে এখানে সিসা তৈরি করা হয়। তাঁরা দিনে ব্যাটারি কাটেন আর রাতে গলান। এক টন ব্যাটারির প্লেট পুড়িয়ে ৬০০ থেকে ৬৫০ কেজি সিসা পাওয়া যায়। উৎপাদিত সিসা তাঁরা দেশের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করে।

ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির ক্ষতিকর দিক তুলে ধরলেন সারিয়াকান্দি উপজেলা উপজেলা স্বাহ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান সরদার যায়যায়দিনকে বলেন, যেকোনো রাসায়নিকের কালো ধোঁয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে সৃষ্ট ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট জনিত বিভিন্ন রোগ হতে পারে। মস্তিষ্কের ক্ষতি সাধারণ হতে পারে। এমনকি ধোঁয়ায় কার্বন-মনোক্সাইডের মাত্রা বেশি হলে ক্যানসারও হতে পারে।

স্থানীয়রা জানান কাজলা এলাকার মহিদুল ইসলাম সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাজলা ইউনিয়ন বিএনপির বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সিসা কারখানাটির মালিক। এ বিষয়ে মুঠোফোনে মহিদুলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি দাবি করেন, কারখানাটি আমার জায়গায় হলেও আমি এটার মালিক না আমি ৩০ হাজার টাকা মাসে জমিটি ভাড়া দিয়েছি মোস্তাক খান নামে একজনকে সে ওখানে কিসের কারখানা দিলো এটা আমার দেখার বিষয় না। কারখানা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোন নম্বর চাইলে মহিদুল বলেন, তার কাছে যে মোবাইল আছে এটাতে মোস্তাকের নাম্বার নাই।

সিসা কারখানার মালিক মাদারগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোস্তাক খানের সাথে কথা বলার জন্য কয়েক বার ফোন দেওয়া হলে কেউ ফোনটি রিসিভ করেনি। অন্য আরেক জনের মাধ্যমে এই প্রতিবেদকে আজকে নিউজ করতে নিষেধ করে বলে আগামীকাল দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলবে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.শাহারিয়ার রহমান বলেন, এটা মানবদেহের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর গতকাল গিয়েছিলাম কাউকে পাইনি। অচিরেই ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালিয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বগুড়া জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহাদীর বিন মোহাম্মদ যায়যায়দিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা পরিচালক স্যারকে বিষয়টি জানাচ্ছি। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে।

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে