নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজওয়ানা কবির একাই সামলাচ্ছেন উপজেলার সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ছোট বড় প্রায় ৯০টি পদের কার্যক্রম। আর এসব কাজ করতে গিয়ে দিনরাত তাকে নিরলসভাবে সময় দিতে হচ্ছে। নিজ কর্মছাড়াও এই বিশাল কর্মভার সামলাতে গিয়ে মাঝে মধ্যে কিছুটা ব্যত্যয়ও ঘটছে।
অন্তর্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন দপ্তরের স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে যে সকল কাজ উপজেলা চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পালন করতেন, তারা না থাকায় সব কমিটির দায়িত্ব পড়ে ইউএনও’র কাঁধে। এছাড়া উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সাধারন শিক্ষা ও মাদ্রাসা মিলিয়ে সরকারি বেসরকারী প্রায় ৬৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দু-একটিতে এডহক কমিটি থাকলেও বাকী গুলোর দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে।
এছাড়া আইন শৃঙ্খলা কমিটি, মাসিক সমন্বয় সভা, উপজেলা শিক্ষা কমিটি, জাতীয় মহিলা সংস্থা, কৃষি উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ভাতা, হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা, বয়স্ক-বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা, অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান, মাতৃত্বভাতা, চোরাচালান প্রতিরোধ, এনজিও সমন্বয়, টেন্ডার, টিআর-কাবিটা, স্কাউট, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন নিলাম কমিটির দায়িত্ব পালন, উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষন, জলমহাল ব্যবস্থাপনা, ভ্রাম্যমান আদালত, উপজেলা সেচ সংক্রান্ত কার্যক্রম, জন্মনিবন্ধন সংশোধন কার্যক্রমসহ সরকারি দপ্তরগুলোর কমিটি এবং বিভিন্ন দিবস উদযাপনের দায়িত্বও পালন করতে হয়। এসব কাজের বাইরেও যে কোন অদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া, অভিযোগ নিষ্পত্তিসহ যে কোন জনগুরত্বপুর্ন কাজ সামলাতে হচ্ছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে। গত ছয় মাস সহকারি কমিশনার (ভূমি) প্রশিক্ষণকালীন ছুটিতে থাকায় সেই দপ্তরের কাজ ও সামলাতে হয়েছে তাঁকে। আর এসব কাজ করতে গিয়ে অনেকটা গলদঘর্ম অবস্থা ইউএনও’র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, অনেক দূর থেকে উপজেলায় এসে অনেক সময় ইউএনও স্যারকে পাওয়া যায় না। এতে পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার আবার আসতে হয়। ফলে আমাদের কিছুটা সমস্যা হয়। এরপরও মেনে নিতে হয় কারন উনার উপর অনেক চাপ। তবে উনার উপর চাপ কমাতে কিছু দপ্তরের কাজ অন্য সরকারি কর্মকর্তারা যারা একটু ফ্রি থাকেন, তাদের দিয়ে করানো যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের একজন অফিস সহকারী বলেন, বর্তমানে তারা কাজের বাড়তি চাপে আছেন। অনেক সময় রাত অবধি কাজ করতে হয়। ইউএনও স্যার অতিরিক্ত সময় অফিসে কাজ করলে কর্মচারী হিসেবে আমাদেরও অফিসে থাকতে হয়।
পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ¦ বাবুল আলম তালুকদার বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্রতিদিন উপজেলার শত শত মানুষ বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে আসে। বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জনপ্রতিনিধিরা না থাকায় তাদের এসব কাজের চাপ পড়েছে ইউএনওর ওপর।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজওয়ানা কবির বলেন, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে সারা দেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় সরকার প্রদত্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে ইউএনওদের। এতে কাজের চাপ থাকলেও সকলের সহযোগিতায় সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, শত ব্যস্ততার মাঝেও চেষ্টা করছি সরকারের দেয়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে। এখন পর্যন্ত পূর্বধলা উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি ভালো এবং জনগণকে কাংখিত সেবা প্রদানের প্রচেষ্টা করছি। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।