সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

কেন্দুয়ায় বৃদ্ধা মায়ের শেষ সম্বল দখলে মরিয়া ছেলে!

কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  ০৫ মে ২০২৫, ১৭:০৫
কেন্দুয়ায় বৃদ্ধা মায়ের শেষ সম্বল দখলে মরিয়া ছেলে!
ছবি: যায়যায়দিন

নেত্রকোনা কেন্দুয়ায় রোয়াইল বাড়ি আমতলা ইউনিয়নের কৈলাটি ফতেপুর গ্রামের হামিদ আখতার বয়সের ভারে শেষ প্রান্তে এসে এই বৃদ্ধা এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হারানোর শঙ্কায় দিন গুনছেন। অভিযোগ—নিজের গর্ভজাত সন্তানই তাঁর শেষ সম্বলটুকু ছিনিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

প্রায় ৭ বছর আগে স্বামী সিরাজুল ইসলামের মৃত্যুর পর পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ হয়। ভাগ্যে জোটে মাত্র ২ কাঠা জমি—যেখানে তিনি শান্তিতে শেষ বয়সটা কাটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, বড় ছেলে মোস্তফা ও পুত্রবধূ সুলতানা সেই জমি দখল করে নিয়েছেন। জমিতে যেতে চাইলেই তাঁকে হেনস্তা করা হয়, এমনকি মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন হামিদা।

বৃদ্ধা হামিদা বলেন, “এই ২ কাঠা জমিই আমার শেষ আশ্রয়। সেটাও ওরা জোর করে দখল করে নিয়েছে। আমাকে গালাগাল করে, প্রতিনিয়তই মারদোর করে। তাঁর দাবি, দ্বিতীয় ছেলে রুস্তমই এখন একমাত্র সন্তান, যিনি তাঁর খোঁজখবর সর্বদাই রাখেন।

সম্প্রতি এই জমি নিয়ে বিরোধ চরমে পৌঁছায়। হামিদার ভাষ্য অনুযায়ী, বড় ছেলের স্ত্রী সুলতানা তাঁকে মারতে গেলে রুস্তম বাধা দেন। এতে দুই ভাইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে, আহত হন বড় ছেলে মোস্তফা। পরে মোস্তফা কেন্দুয়া থানায় মামলা করলে পুলিশ দ্রুত রুস্তমকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

এ ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে—বৃদ্ধা মায়ের অভিযোগ দিনের পর দিন আমলে না নেওয়া হলেও বড় ছেলের মামলায় পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিল কেন? হামিদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান “আমার নির্দোষ ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল, আর যারা আমাকে মারল তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি বিচার চাই।”

জানা গেছে, হামিদা আক্তার গত ২৬ এপ্রিল কেন্দুয়া থানায় বড় ছেলে মোস্তফা ও পুত্রবধূ সুলতানার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ দেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সফিউল ইসলাম বলেন, “মারধরের প্রমাণ মেলেনি, শুধু পারিবারিক ঝগড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।”

অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ছোট ভাই সোহেল বলেন, “আমার মায়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোনো নির্যাতন করা হয়নি।”

এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, হামিদা আক্তারের অভিযোগের প্রতি প্রশাসনের তেমন নজর নেই; বরং প্রভাবশালী পক্ষের দিকেই আইন বেশি সহানুভূতিশীল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু পারিবারিক বিরোধ নয়, বরং সমাজে বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্বহীনতার করুণ চিত্র। দেশে পিতা-মাতা ভরণপোষণ আইন থাকলেও বাস্তবে তা অনেকক্ষেত্রেই উপেক্ষিত। হামিদা আক্তারের ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে।

সচেতন মহল বলছে, দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হামিদা আক্তারের অভিযোগের সুষ্ঠু নিষ্পত্তি প্রয়োজন। পাশাপাশি, এই ঘটনা যেন সমাজে বৃদ্ধদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় করে তোলে, সেটাই প্রত্যাশা।

হামিদা আক্তারের শেষ আর্তি, “আমার শেষ বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু ফেরত চাই। আমি বিচার চাই, বাঁচতে চাই।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে