বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মাদকের ছোবলে দিশেহারা রাজস্থলীর যুব সমাজ

রাজস্থলী (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি
  ২১ মে ২০২৫, ১৬:১৫
আপডেট  : ২১ মে ২০২৫, ১৬:৪১
মাদকের ছোবলে দিশেহারা রাজস্থলীর যুব সমাজ
ফাইল ছবি

মাদকের ভয়াল ছোবলে দিশেহারা রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার যুবসমাজ। হাত বাড়ালে পাওয়া যাচ্ছে পছন্দসই মাদক। পাড়া-গ্রামে গঞ্জে মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। প্রকাশ্যে চলছে মাদকদ্রব্য ক্রয় বিক্রয়।

চন্দ্রঘোনার ফেরিঘাট, বাঙ্গালহালিয়া বাজার, শফিপুর, ইসলামপুর, তিন নং শফিপুর, ৪ নং শফিপুর, চেয়ারম্যান টিলা প্রাইমারী স্কুলের ভিতর, বালুমুড়া, রাজভিলা, থ্যাংখালি রাজস্থলী উপজেলার রেষ্ট হাউজের পিছনে, শহীদ মিনার সংলগ্ন, সীমান্ত সড়ক এখন জমজমাট ইয়াবা, বাবা নামের মাদক বিকিকিনির জমজমাট স্পট।

1

বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের উপজাতি পল্লীতে চোলাই মদ (বাংলামদ) বিকিকিনির নিরাপদ রুট। উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া বাজার হয়ে দশমাইল হতে, সিএনজি অটোরিক্সা দিয়ে সুকৌশলে রাঙ্গুনিয়ার গোডাউন ব্রীজ পার করে চট্টগ্রাম শহরে পাচার হচ্ছে শতশত লিটার বাংলা মদ ।

এছাড়া এই বাংলা মদের উৎপত্তিস্থল বাঙ্গাল হালিয়া ডাক বাঙ্গাল পাড়া, কুটিরিয়া পাড়া, হেডম্যান পাড়া কুদুমছড়া, ধলিয়া মার্মা পাড়া রাজস্থলী উপজেলা সদরের নোয়াঝিড়ি পাড়া, তাইতং পাড়া, হ্নারা মুখ পাড়া ।

পুলিশ এ পর্যন্ত চিহ্নিত কোন শীর্ষ ইয়াবা ও মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। দুয়েকজন কদাচিৎ ধরা পড়লেও দ্রুত জামিনে এসে আবারও দ্বিগুণ উৎসাহে মাদক কারবার শুরু করে।

উপজেলার ইসলামপুর (৫ নং) এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আছেন তিনি কয়েক বার পুলিশের জালে ধরা পরার পর আবারো জামিনে এসে মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়ে।

দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলেই রাজস্থলী উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারিরা গা ঢাকা দেয়।

পুলিশ মাদক আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। তারা আত্মগোপনে চলে গেলেও একদিনের জন্যও মাদক বিক্রি বন্ধ হয়নি।

উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে প্রায় ২০/৩০টি স্পটে কৌশলে ও বিভিন্ন পন্থায় মাদক বিকিকিনি করছে।

সূত্র জানায়, পুলিশ অভিযানে যাওয়ার আগে কথিত সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে কারবারিরা সতর্ক হয়ে যায়। যার ফলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কাঙ্খিত সুফল পায় না।

অপরাধীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কথিত সোর্স নামধারীরা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ টাকা উত্তোলন করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাজস্থলী তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, অপসংস্কৃতি ও মাদকের ছোবলে ধ্বংসের পথে এখানকার যুবসমাজ। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা নেশায় আসক্ত হচ্ছে, পরিবার ও সমাজের জন্য ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করছে তারা।

আর এর পেছনে কারণ হিসেবে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাব রয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। রাজস্থলী বাজার জামে মসজিদের ঈমাম মৌলনা নূরুল হক বলেন, স্কুল বা কলেজ থেকেই নেশার দিকে হাত বাড়ায়।

ধীরে ধীরে বন্ধুদের আড্ডায় শুরু করে গাঁজা সেবন। সিগারেট ও গাঁজার পাশাপাশি নেশার উপকরণে যুক্ত হয় ফেনসিডিল। বছর তিনিক আগে মরণ নেশা ইয়াবা ও হেরোইনে আসক্ত রাজস্থলী উপজেলার যুব সমাজ।

গোপন সংবাদের মতে, সর্বত্র মাদকের ছড়াছড়ি। ঘরের বাইরে বেরিয়ে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে চোলাইমদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা।আমি প্রত্যেক জুমার দিন নামাজের পূর্বে মসজিদে বয়ান করি যুব সমাজের উদ্যােশে যাতে মাদক সেবন থেকে বিরত থাকে।

মাদককে না বলার জন্য সকল র্ধমপ্রাণ মুসলিম ভাইদের সচেতন করি। পুলিশের অভিযানে প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। কিন্তু কোনভাবেই দমন করা যাচ্ছে না।

বিভিন্ন পর্যায়ে মাদকের কুপ্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় একাধিক চুরি ও অপরাধের ঘটনা ঘটছে। মাদক সেবন করে এলাকায় প্রতিনিয়ত একাধিক চুরির ঘটনা ঘটছে।

মাদকের টাকা জোগাড় করতে এসব ঘটনার জন্ম বলে তিনি দাবি করেন। ইতিমধ্যে চুরি ও মাদকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ও প্রতিবাদসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে রাজস্থলী উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ।

রাজস্থলী ও চন্দ্রঘোনা থানা সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ী চোলাই মদ পাচারকারী চন্দ্রঘোনা এলাকায় মদ-ইয়াবা বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত। রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নাইমুল ইসলাম রনি বলেন, মাদকের ভয়াবহতা বৃদ্ধির পিছনে সমাজের দায়িত্বশীল রাঘববোয়ালদের অনেকেই অবৈধ নেশাজাত দ্রব্যের আমদানিকারক হলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

রাজস্থলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাষ্টার খলিলুর রহমান শেখ বলেন, ‘সমাজের বা সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়কে রোধ করার জন্য তাদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতার ধারণা তৈরি করা। এখানে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতার ব্যাপারে। তারপর সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন, স্কুল-কলেজ এবং গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হবে।’

গণমাধ্যমে যদি এসব বিষয়ের ক্ষতিকর দিক ও প্রভাব তুলে ধরা হয়, তারা যদি এ ধরনের কাজ যে গর্হিত অপরাধ এবং এটা করা অনুচিত এ বিষয়টিকে প্রচার করেন তাহলে বিষয়টির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হতে পারে এবং মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে পরিবার ও দেশকে রক্ষা করতে হলে আগে দরকার পরিবারের সচেতনতা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে