মে মাস নিয়ে উপকূল বাসীর আতঙ্কের শেষ নেই। এই মাসেই ধেয়ে এসেছিল আইলা, আম্ফানের মতো একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়। আবার এমন এক ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক দানা বাঁধছে বাংলাদেশের আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাসের পর। বলা হয়েছে, চলতি মে মাসের শেষের দিকে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় শক্তি। আবহাওয়া পূর্বাভাস সূত্রে বলা হয়েছে,বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা চলতি মে মাসের শেষ সপ্তাহে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। সম্ভাব্য সময়সীমা ২৭ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত।
আর এ ঘূর্ণিঝড়ের চোখ রাঙানীতে আতঙ্কিত উপকূলের মানুষ।রেমাল, ইয়াস, আম্ফান অশনির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই ফের শক্তি এর অশান্তি শুরু হয়েছে উপকূল বাসীর মধ্যে। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলবাসীর ভরসারস্থল বেড়িবাঁধ। সেই বেড়িবাঁধ দূর্বল থাকায় উপকূলবাসীর মনে শঙ্কা বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী মে মাসের শেষ নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় শক্তি। এই মে মাসে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়েছিল আইলা, ফণী, বুলবুল, ইয়াস ও আম্ফানের মতো প্রলয়ংকরী সব ঘূর্ণিঝড়। তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় নদী ভাঙন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ।
উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। সামনে বর্ষাকাল ও ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছেন খুলনা উপকূলের হাজার হাজার মানুষ। খুলনা জেলার দক্ষিঞ্চলে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে থাকেন এ অঞ্চলের মানুষ। ঘূর্ণিঝড় যদি খুলনা উপকূলে আঘাত নাও হানে, তবুও এর প্রভাবে নদনদীতে পানির চাপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। আর পানি বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয়ে আছে উপকূলবাসী।
খুলনা জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৫টি পোল্ডার আছে। ৫১০কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে, এর মধ্যে ৯০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাইকগাছা উপজেলায় ২৫০কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে এর মধ্যে ৩৮ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।
জানা গেছে, ষাটের দশকে মাটি দিয়ে তৈরি ওই ভেড়িবাঁধ ছিল ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া। কিন্তু এখন ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও চওড়ার অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। অর্থাভাবে দীর্ঘদিনেও প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার করতে না পারায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ষাটের দশকে তৈরি ওই ভেড়িবাঁধের বেশিরভাগই দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে বাঁধগুলো ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং নিম্নচাপ, লঘুচাপ, আমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে লোকালয়ে পানি ঢোকা ঠেকাতে পারছে না। দুর্বল এসব ভেড়িবাঁধের কারণে বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। তাছাড়া নিম্নচাপ এবং অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারেও বাঁধ উপচিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। ফলে উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সূত্র আরো জানা গেছে, দেশের উপকূলীয় তিন জেলার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা কম এবং সেগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
তাছাড়া ওই বাঁধ দীর্ঘদিনেও ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। লবণাক্ত মাটি দিয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো তৈরি। উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ নদ-নদীর পানিও লবণাক্ত। লবণাক্ত পানি বেড়িবাঁধের মাটির বান্ডিং দুর্বল করে ফেলে। ফলে অতিরিক্ত জোয়ারের পানির চাপে বাঁধের মাটি ধসে যায়। তাছাড়া ভেড়িবাঁধ ছিদ্র করে চিংড়ি ঘেরে লবণ পানি তোলার কারণেও বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে গেছে। যে কারনে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। বাস্তহারা হয়েছে বহু মানুষ।
ফলে সম্প্রতি সব চেয়ে বড় দুর্যোগ বলে মনে করা হয় নদী ভাঙন। এ নদী ভাঙন যেন উপকূলের মানুষের পিছু ছাড়ছে না। এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের পরে উপকূলের মানুষের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেনা। তারপর আবারও নতুন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে উপকূলবাসী শঙ্কিত হয়ে পড়ে। উপকূলের মানুষের এ ধারনের দুর্যোগ থেকে পরিত্রান পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো টেকসই বেড়িবাঁধ নিমাণ করা।ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটে উপকূলীয় এলাকার মানুষের।