বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মান্দায় ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসল নষ্ট

ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন
মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ২১ মে ২০২৫, ১৬:৫৫
মান্দায় ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসল নষ্ট
নওগাঁর মান্দায় ভাটার কালো ধোঁয়া থেকে ফসল রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেন কৃষকরা: ছবি যায়যায়দিন

ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধান, ফলজ (আম,কাঁঠাল,লিচু,কলা,নারিকেল,সুপারি) গাছ, বাঁশঝাড়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার ৫নং গণেশপুর ইউনিয়নের মীরপুর,কাঞ্চন ও উত্তর পারইল গ্রামের কৃষকরা।

প্রতি বছর ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ফসলি জমির মাঝখান থেকে ইট ভাটা সরিয়ে নিতে কৃষকরা ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন।

1

কৃষকদের অভিযোগ, নওগাঁর মান্দা উপজেলার ৫নং গণেশপুর ইউনিয়নের মীরপুর, কাঞ্চন ও উত্তর পারইল গ্রামের ৬০-৭০ বিঘা জমির বোরো ধান একটি ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে শুকিয়ে গেছে। সাতবাড়িয়ার পূর্ব পাশে নূরজাহান ব্রিকস নামক একটি ইটভাটা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়ায় আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল ও সুপারি গাছের পাতা বাদামি হয়ে গেছে বলে জানান তারা।

মীরপুর গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন ও হেলাল অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিবছর ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিস্তীর্ণ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু, ইটভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পান না।

এ বছর ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আমাদের প্রায় ৩ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষে পারইল গ্রামের মজিবর রহমান গত ১৫ মে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।’

গণেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী বলেন, ‘ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া এলাকার গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি করছে। ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে ইটভাটা মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু, মালিকের কাছ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’

পারইল গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আলী হায়দার অভিযোগ করে বলেন, ‘নূরজাহান ব্রিকস নামক ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আমার তিন বিঘা জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করছি কিন্তু, ইটভাটা মালিক আমাদের সাড়া দিচ্ছেন না।’

এদিকে, ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকারের দাবিতে আজ বুধবার সকালে মিলনের ইটভাটায় এক মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন আলী হায়দার, আবুল কালাম, আফসার আলী, এবং সজিব প্রমুখ। এতে স্থানীয় ভূক্তভোগী কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন এই ইটভাটা থেকে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে। এর ফলে এলাকার ধান ক্ষেত পুড়ে গেছে এবং আমগাছের আম ঝড়ে পড়ছে। এতে কৃষকেরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন।

তারা আরও বলেন, আমাদের প্রধান জীবিকা হচ্ছে কৃষি। ধান ও আম বিক্রি করেই সংসার চলে। কিন্তু ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে আমাদের ফসল শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা এর সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ এবং ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

এ সময় অনেকে প্রতীকীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ধান ও আম হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদকারীরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বর্তমানে ওই উপজেলায় ২৩টি ইটভাটা চলমান রয়েছে। এরমধ্যে শুধু একটি ভাটা ভেঙে এবং দু’একটি ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়।

এর আগে গত ১০ মার্চ (সোমবার) বেলা ১১টায় উপজেলার গণেশপুর ইউনিয়নের সতীহাটের পাশে নীলকুঠি মোড়ে ভাই ভাই ব্রিকস নামক ইটভাটায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের অংশ হিসাবে, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের সার্বিক নির্দেশনায় এই অবৈধ ভাটার চিমনি ও কিলন ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ অভিযান পরিচালনা করেন জেলা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান ও মো. সাকিব বিন জামান প্রত্যয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হোসেন এবং মান্দা ফায়ার সার্ভিসের সিভিল ডিফেন্স লিডার মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ।

অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, আনসার বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস সার্বিক সহযোগিতা করে। আগামীতেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে