রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছেন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী সাবরেজিস্ট্রার মো: বেলাল উদ্দিন আকন্দ শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক এখন আত্মগোপনে ।
মাত্র ৬ বছর বয়সেই তিনি পেয়েছেন (মুজিবনগর কর্মচারী) সনদ! ওই সনদে তিনি চাকরি করেছেন দীর্ঘদিন । তার জন্মসনদ অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন ৬ বছরের শিশু। প্রকৃতপক্ষে ‘মুজিবনগর কর্মচারীর’ জাল সনদ দিয়ে সাবরেজিস্ট্রার পদে চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাধমে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের পর আত্মগোপনে পালিয়েছে রয়েছেন।
২০০৮ সালেও তার বাড়িতে একটি কাঁচা চার চালা টিনের ঘর ছিল ।
সাবরেজিস্ট্রার বেলাল উদ্দিন আকন্দ ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকারের সময় গাজীপুরের শ্রীপুর,মুন্সিগঞ্জের সদরে মাত্র ছয় বছর চাকুরী করে বাড়িতে পাঁচ হাজার বর্গফুট তিন তলা অত্যাধুনিক বিলাস বহুল অট্টালিকা , ১ টি প্যাডো জিপ,১ টি প্রাইভেট কার , দুইটি মটরসাইকেল দৌলতপুর বাজারে ৬০ শতাংশ জমি সহ পাকা মার্কেট ক্রয়, আবু ্বকশ বাড়ির পাশে ৩০ শতাংশ বাড়ি কয় করে,বাড়ির পূর্ব পাশে ৫৫ শতাংশ পুকুর ক্রয় করে ভরাট করে, বাড়ির পূর্ব পাশে ৫০/৬০ বিঘা জমি ক্রয় ইরি-বোরো মেশিন ক্রয়, মুলকান্দি ব্রীজের ঢালে ৪০ শতাংশ জমি ক্রয় , ঢাকার মিরপুরে ৫ তলা বাড়ি,ঢাকার পাশে আশুলিয়া,সাভার স্প্রিং মিল কারখানাসহ স্ত্রী,ছেলে,মেয়ে,শালার নামে অঢেল অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
এতে দেখা যায় তিনি প্রতিদিন দলিল সম্পাদন বাবদ প্রায় ১০/১৫ লাখ টাকা ঘুস নিতেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার সহকর্মী জানান,গত ২০০৯ সালে বাড়িতে চার চালা কাঁচা টিনের ঘর ছিল। মাত্র ৬ বছর চাকুরী করে বাড়িতে পাঁচ হাজার বর্গফুট তিন তলা অত্যাধুনিক বিলাস বহুল অট্টালিকা , ১ টি প্যাডো জিপ,১ টি প্রাইভেট কার , দুইটি মটরসাইকেল দৌলতপুর বাজারে ৬০ শতাংশ জমি সহ পাকা মার্কেট ক্রয়, আবু ্বকশ বাড়ির পাশে ৩০ শতাংশ বাড়ি কয় করে,বাড়ির পূর্ব পাশে ৫৫ শতাংশ পুকুর ক্রয় করে ভরাট করে, বাড়ির পূর্ব পাশে ৫০/৬০ বিঘা জমি ক্রয় ইরি-বোরো মেশিন ক্রয়, মুলকান্দি ব্রীজের ঢালে ৪০ শতাংশ জমি ক্রয় , ঢাকার মিরপুরে ৫ তলা বাড়ি, ঢাকায় আরো দুইটি ফ্ল্যাট, ঢাকার পাশে আশুলিয়া,সাভার স্প্রিং মিল কারখানাসহ স্ত্রী,ছেলে,মেয়ে,শালার নামে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ করেছে ।
এছাড়া প্রতিদিন সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ঘুসের টাকা বাসায় নিয়ে যেতেন জাহানারা আক্তার নামের এক নারী । তিনি তার অফিসে নিজের চেয়ারের পাশে বসিয়ে রাখতেন। টাকার হিসাব রাখত। সে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারী নয়। বাসা পর্যন্ত ঘুসের টাকা পৌঁছে দিত নিজেই। এজন্য তাকে প্রাইভেট কার কিনে দিয়েছেন সাবরেজিস্ট্রার। আর এই সুযোগে জাহানারা আক্তার নিজেই ধাপে ধাপে দৌলতপুরের জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেছে। তার একাধিক ট্রাকও মাইক্রোবাস রয়েছে বলেও জানা গেছে।
আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি সাবরেজিস্ট্রার বেলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৬ বছরেরও কম। এরপরও তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ হিসাবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে চাকরি করছেন। তার এই জাল সনদের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ হিসাবে ২০০৯ সালে ১৯০ জনকে সাবরেজিস্ট্রার পদে আত্তীকরণ করা হয়েছিল উচ্চ আদালতের নির্দেশে। তাদের মধ্যে ১৯৬৮, ১৯৬৭, ১৯৬৬, ১৯৬৫ সালে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরাও ছিলেন। যাদের বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র ৩ থেকে ৬ বছর ছিল।
জালিয়াতির মাধ্যমে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া নিয়ে তখন নিবন্ধন দপ্তরসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। কারণ মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। ওই সরকারের কর্মচারী হতে হলে তাদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্মসাল হওয়া দরকার ১৯৫২ অথবা তার পূর্বে। কিন্তু নিয়োগ পাওয়াদের সবারই জন্ম তারিখ ছিল ১৯৫৩ সালের পরে। এর মধ্যে ১৩৮ জনের বয়সই ছিল ১০ বছরের নিচে। আর ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সালে জন্ম তারিখ আছে এমন সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ জন। জানা যায়, ২০০৯ সালে মুজিবনগর কর্মচারীর কোটায় সাবরেজিস্ট্রারের চাকরি পাওয়ার আগে মো: বেলাল উদ্দিন আকন্দ দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তার স্ত্রী দেলোয়ারা আকন্দ দৌলতপুর আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা হিসাবে রয়েছেন।
আত্মগোপনে থাকা মো: বেলাল উদ্দিন আকন্দ মোবাইল ফোনে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সবই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। যারা আমার সম্পর্কে এমন কথা রটাচ্ছেন তারা মিথ্যা বলছেন। আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই, যা আছে তা সবই বৈধ।