নওগাঁর মান্দায় ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে বেরিয়ে আবারো জোরপূর্বক ছাত্রী দোলাকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় সেই ভাইরাল শিক্ষক আকরাম মন্ডলের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করেছে ওই ছাত্রীর বাবা।
গত মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা এমদাদুল বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে সেই প্রধান শিক্ষক পলাতক রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর রহমান।
অভিযুক্ত আকরাম মণ্ডল উপজেলার হাজী গোবিন্দপুর ফকিরপাড়া গ্রামের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফসার আলী মন্ডলের ছেলে ও মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং অপর অভিযুক্ত ফারুক হোসেন একই গ্রামের মোকলেছার রহমানের ছেলে।
জানা যায়, তার বিদ্যালয়ের সাড়ে ১৬ বছর বয়সী এসএসসি পরীক্ষার্থী দোলাকে বিয়ের প্রলোভনে তার বাড়িতে রেখে ধর্ষণ করেন এবং তাকে ভূয়া বিয়ে করেন।
এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। সেই অভিযোগের তদন্তের সময় বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেন তিনি। ওই ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল বুধবার বিকেলে মান্দা থানায় একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা।
মামলায় প্রধান শিক্ষক আকরাম মণ্ডল ও তার প্রথম স্ত্রী স্বপ্না খাতুনকেও আসামি করা হয়। মামলার পর সে পলাতক ছিলেন। পরে র্যাব ও মান্দা থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে গত ১মে বৃহস্পতিবার বিকেলে নাটোরের বনপাড়া থেকে তাকে আটক করা হয়।
সে গত ১৯ মে সোমবার জেল থেকে জামিনে বেড়িয়ে আসে। এ সময় আমার মেয়ে আমার বাড়ীতে অবস্থান করছিল। গত ২০ মে মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে আমার মেয়ে আমার বসত বাড়ীর সামনে মাটির রাস্তায় বের হতেই পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আকরাম মণ্ডল, ফারুক হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনের সহায়তায় আমার মেয়েকে জোর পূর্বক মোটর সাইকেলে করে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা বলেন, গত ২৬ মার্চ বুধবার মুক্তিযোদ্ধা বালিকা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিয়ে করে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন প্রধান শিক্ষক আকরাম মন্ডল।
বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ এলাকার লোকজন ফুঁসে উঠেন। এরপর প্রধান শিক্ষক আকরাম মন্ডলের অপসারণসহ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।
একই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হন তিনি। তার এসব কুকীর্তির ঘটনায় এলাকাবাসী মান্দা ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেন। ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গত ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদের হলরুমে এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
তদন্তে প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেন। এরপর গত ২০ মে মঙ্গলবার দুপুর দেড় টার দিকে আবারও তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা এমদাদুল বলেন, আমি অশিক্ষিত মানুষ। আমাদের এলাকার মুনসুর কাজীর সহযোগী আলম এসে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে।
আমাকে যেখানে স্বাক্ষর দিতে বলছিলো সেখানে আমি স্বাক্ষর দিয়েছিলাম। এরপর আমি কয়েকবার তার কাছে গিয়ে বিয়ের নকল চাইলে সে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করে আমাকে নকল দেননি।
এর মধ্যে স্থানীয়দের করা অভিযোগের জন্য আমাকে ডাকলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিইনি বলতে বাধ্য করে।
আমার মেয়েকে যদি বিয়ে না করে তাহলে সে তাকে ধর্ষণ করেছে। সেজন্য আমি তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছি। এরপর জামিনে বেরিয়ে এসে আমার বাড়ি থেকে আমার মেয়েকে জোড়পূর্বকভাবে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যায় আকরাম মাষ্টার ও তার ক্যাডার বাহিনীরা। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, ‘মামলার পর থেকে আকরাম মণ্ডলসহ অন্যান্য আসামীরা পর্যন্ত পলাতক রয়েছে। তাদেরকে আটক করতে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।’