বিদ্রোহ ও তারুণ্যের কবি আমাদের কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাকাব্যে ধুমকেতুর মতোই তার আবির্ভাব। কবি বিদ্রোহ করেছিলেন সকল অন্যায়, অসত্য, শোষণ-নির্যাতন আর দুঃখ-দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে। কবিতা লেখার অপরাধে কারারুদ্ধ হন। বন্দি করেও থামানো যায়নি তার লেখা। চরম আর্থিক অনটন আর দুঃখ-দারিদ্র্যেও তার বাল্যকাল কাটে বলে তাকে সবাই দুখু মিয়া বলে ডাকতো। কবি ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১২ সালে কবি আসানসোলের একটি হোটেলে স্বল্প বেতনে কাজ করতেন।
তিনি প্রায় চার হাজারের মতো গান রচনা করেন। তার লেখা গান আজও খুব জনপ্রিয়। আমাদের রণ সংগীত ‘চল চল চল’ এর রচয়িতা তিনি। গনমানুষের এই কবি চিরকাল আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।’ কথাগুলো বলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
রোববার (২৫মে) সারাদিন ব্যাপি বিভিন্ন অনুুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এঁর ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তী পালন করা হয়েছে।
রোববার সকাল সাড়ে ৯ টায় প্রথমে কবির স্মৃতি বিজড়িত স্থান মিশনপাড়ার আটচালা ঘরের পাশে স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পনের মধ্যদিয়ে ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুরু হয়।
কবির স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সহ সামাজিক সাংস্কৃতিক কবি সাহিত্যিক ও কবি প্রেমিগন।
পুষ্পমাল্য অর্পন শেষে কবির স্মৃতি স্তম্ভে দাড়িয়ে কবির আত্নার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মোনাজাত করা হয়।
এর পর সকাল ১০ টায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে কার্পাসডাঙ্গা শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়।
শোভাযাত্রা শেষে সকাল ১১ টায় কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথি মিত্র, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি মোঃ হুমাউন কবির, দর্শনা থানা বি এন পি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা আবুল হাসনাত, দামুড়হুদা উপজেলা বি এন পি সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, সাধারন সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু, আটচালা ঘর মালিক প্রকৃতি বিশ্বাস, জেলা জাসাস সভাপতি মোঃ সহিদুল হক, কবি কাজল মাহমুদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহবায়ক আসলাম আলি অর্ক, কার্পাসডাঙ্গা ইউ পি চেয়ারম্যান মোঃ আঃ করিম, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি শামসুল আলম, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব ও ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম টুটুল সহ স্থানীয়রা বক্তব্য রাখেন। বিকালে একই মঞ্চে কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুুষ্ঠান এবং সন্ধায় রিক্তের বেদন নাটক মঞ্চস্থ হয়।
উল্লেখ্য, ১৯২৬ ও ১৯২৭ সালে কবি কার্পাসডাঙ্গায় দীর্ঘসময় অবস্থান করেন। ওই সময় কার্পাসডাঙ্গার ভৈরব নদের তীরে বসেই সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রচনা করেছেন তিনি। টানা দুই মাস কবি হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের আটচালা ঘরে ছিলেন। হর্ষপ্রিয় বিশ্বাস ছিলেন তৎকালীন নদীয়া কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। এখন তাঁর উত্তরসূরিরা নিজ অর্থ ব্যয় করে নজরুলের স্মৃতিঘেরা বাড়িটি টিকিয়ে রেখেছেন।
১৯২৬ সালে বিপ্লবী হেমন্ত কুমার ও মহিম সরকারের আমন্ত্রণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে নদীপথে সপরিবারে কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। সে সময় ভারতবর্ষে চলছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনের হাওয়া বয়ছিল কার্পাসডাঙ্গায়ও। কবি নজরুল গঠন করেছিলেন 'শ্রমিক প্রজা কৃষক পাটি'। মূলত স্বদেশি আন্দোলনের নেতাদের উৎসাহ দিতেই পার্টির পক্ষে কবি কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। এখানকার জীবনযাত্রা ও পরিবেশ তাঁকে সাহিত্যকর্ম মৃত্যুক্ষুধা ও পদ্মগোখরো এবং লিচুচোর কবিতাসহ অনেক গান লিখতে সহায়ক হয়েছিল। স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িতে এখন থাকছেন হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের ছেলে প্রদ্যুত বিশ্বাসের দুই ছেলে-প্রকৃতি বিশ্বাস ওরফে বকুল বিশ্বাস ও মধু বিশ্বাস। যে ঘরে কবি থাকতেন সেই ঘরে সস্ত্রীক থাকেন বকুল বিশ্বাস।