মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

পাকশী রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি অফিস যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
  ২৬ মে ২০২৫, ১৫:২৮
পাকশী রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি অফিস যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা
ছবি : যায়যায়দিন

বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয়ে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থায়। ২২ বছরের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, হয়রানি, আর্থিক দূর্নীতি, হরিলুটের সিন্ডিকেট আপাতত ভেঙ্গেছে।

তবে গত ২০ মে রাতে পাকশী ডিইও অফিসের উচ্চমান সহকারী মো. মমতাজুল হাসান ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক শেখ জাবের আলীকে পূর্বাঞ্চল চট্রগ্রামে বদলী করেন ঢাকা রেলভবনের উপ-পরিচালক/পার্সোনেল-৩ পলাশ কুমার সাহা। পত্রে ২২ মে’র মধ্যেই এই দুই কর্মচারীকে রেলওয়ে জিএম/ পূর্ব যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিন (২৩ মে) সকালে তাদের বদলী স্থগিত করা হয়। এঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা চলছে পাকশী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাকশী ডিইও অফিসের উচ্চমান সহকারী মো. মমতাজুল হাসান ওরফে বাবুর বাবা এই অফিসে কর্মরত ছিলেন। পোষ্যকোটায় বাবুও ওই অফিসে চাকরি পান। সেই থেকে একই অফিসে ২২ বছর ধরে চাকরি করছেন বাবু। এই অফিস থেকে দুই এক বছর পরপরই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলী হয়। কিন্তু মমতাজুল হাসান বাবুর বদলী হয় না।

এই সুযোগেই ডিইও অফিসে একক আধিপত্য গড়ে তোলেন বাবু। বিগত ২২ বছরেও মমতাজুল হাসান বাবুর ব্যতিত কোন কাজই হয়নি পাকশী ডিইও অফিসে। রেলওয়ের জমি লীজ প্রদানের নামে অর্থ আত্মসাত, ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে হয়েছেন কোটি টাকার মালিক।

ঈশ্বরদী শহরে কিনেছেন জমি। নির্মাণ করেছেন বিলাস বহুল বাড়ি। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাসহ বিভিন্ন স্থানে কিনেছেন লিছুবাগানসহ কোটি টাকার জমি। সুত্র মতে, বিগত ১১ বছর আগে অনিয়ম, দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য করে রেলওয়ের সম্পত্তি লীজ দেওয়ার অভিযোগে তাকে রাজশাহী ভূ-সম্পত্তি অফিসে বদলী করা হয়।

কিন্তু সেই সময় রেলকর্তৃপক্ষ সঙ্গে মোটা অঙ্কেও আর্থিক লেনদেন কয়েকদিনের মধ্যেই পাকশী ভূ-সম্পত্তি অফিসে বদলী হয়ে আসেন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ম্যানেজ করে একক ক্ষমতায় গড়ে তোলেন ঘুষ বাণিজ্য।

সুত্রগুলো মতে, পাকশী ভূ-সম্পত্তি অফিস মানেই ঘুষের রাজত্ব। এই কারণে সম্প্রতি দূর্নীতি দমন কমিশন অভিযান চালিয়ে অফিসের সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে। এরপরই তাকে লালমনিরহাট ভূ-সম্পত্তি অফিসে বদলী করা হয়।

রেলওয়ে পাকশী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে রেলভবণ থেকে গত ২০ মে মমতাজুল হাসান ওরফে বাবু ও শেখ জাবের আলীকে পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে বদলী করা হয়। ওই একই দিনে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রাজশাহীর চীফ পার্সোনেল অফিসারের পক্ষে জুনিয়র পার্সোনেল অফিসার-২ (পশ্চিম) চলতি দায়িত্বে থাকা মো. মিজানুর রহমান পাকশী ডিইও অফিসের উচ্চমান সহকারী মো. মমতাজুল হাসানকে রাজশাহী সিইও অফিসে , অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক শেখ জাবের আলী ও ট্রেসার একেএম রাশেদুল ইসলামকে লালমনিরহাট ডিইও অফিসে, ডিএমই (লোকো) পাকশী অফিসের সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক কে পাকশী ডিইও অফিসে বদলী করা হয়।

এই সুযোগে মমতাজুল হাসান ও জাবের আলী রেলভবনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে চট্রগ্রামের বদলী স্থগিত করে রাজশাহীতে যোগদান করেন। সুত্রমতে, মমতাজুল হাসান ওরফে বাবু ডেপুটেশনে পাকশী ভূ-সম্পত্তি অফিসে কাজ করার চেষ্টাও করছেন বলে সুত্রগুলো দাবী করেন।

এসব বিষয়ে জানতে পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, কি কারণে বদলী করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। রেলওয়ে জিএম রাজশাহী মমতাজুল হাসান ও শেখ জাবের আলীকে ছেড়ে দিতে বলেছেন আমি ছেড়ে দিয়েছি। তারা রাজশাহীতে যোগদান করেছে। এর বেশি কিছু আমার বলার নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে