বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিএনপির উপর ভর করে বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে আ.লীগ

নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২৭ মে ২০২৫, ১৫:৩৩
বিএনপির উপর ভর করে বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে আ.লীগ
ছবি : যায়যায়দিন

হবিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। দেশে পট-পরির্তনের পর স্থানীয় বিএনপি-যুবদলের কতিপয় নেতারের উপর ভর করে আওয়ামী লীগ নেতারাই কুশিয়ারা নদী থেকে টানা অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।

ফলে হুমকির মুখে রয়েছে কুশিয়ারা নদীর উভয়তীরে অবস্থিত নির্মাণাধীন প্রতিরক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

1

প্রভাবশালীদের দাপটে অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে মামলা-হামলার ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয়রা। অন্যদিকে প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষুব্দ পরিবেশবিদরা। তবে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

সিলেট-সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের মিলনস্থল শেরপুর এলাকা। চার জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা শেরপুর সেতুর অদূরে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে একাধিক সংঙ্ঘবদ্ধ চক্র।

আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর, পারকুল এলাকা থেকে মা এন্টারপ্রাইজ, রনি এন্টারপ্রাইজ, রাইসা এন্টারপ্রাইজ, আলী এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনুমতি না নিয়ে সর্ম্পূন অবৈধভাবে কুশিয়ারা নদীতে ৫-৬টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেনের কাজে বালু দেয়ার কথা উল্লেখ করে ওয়াহিদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ। তবে শর্ত লঙ্ঘন করে একাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন পক্ষের কাছে বালু বিক্রি করছে ওয়াহিদ এন্টারপ্রাইজ।

দেশে পট-পরির্তনের পর স্থানীয় বিএনপি-যুবদলের কতিপয় নেতারের উপর ভর করে আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতেই রয়ে গেছে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের নিয়ন্ত্রণ। অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে বাড়ছে ভাঙন, হুমকির মুখে রয়েছে কুশিয়ারা নদীর উভয়তীরে ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রতিরক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে গত দুই মাসে অন্তত ১০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে পাহাড়পুর, পারকুল এলাকায়। ফলে মামলা-হামলার ভয়ে তটস্থ এলাকাবাসী।

প্রকাশ্যে অবৈধ বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদেরা। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ধরা'র নেতৃবৃন্দ মনে করেন, রাজনৈতিক প্রভাবে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে কুশিয়ারা নদীর ভাঙন তরান্বিত হবে। বিপর্যয় ঘটবে পরিবেশের।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ধরা’র সদস্য সচিব শরীফ জামিল, বলেছেন, ওয়াহিদ এন্টার প্রাইজকে কর্তৃপক্ষ যে পরিমান বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন তার কয়েক গুণ বেশী বালু উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানেরও চলামান রয়েছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকী।

এছাড়া এক জায়গায় থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তলদেশ গভীর হওয়ায় ভাঙ্গনের মূখে ঝুকিঁপুর্ণভাবে রয়েছে উভয় তীরের কুশিয়ারা ডাইক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। জরুরী ভিত্তিতে এ সব বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান তিনি।

অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, এখন পর্যন্ত অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার খবর তাদের চোখেঁ পড়েনি।

দ্রæত অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে কুশিয়ারা নদীর পাড়ের মানুষের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর ডাইকের মেগা প্রকল্প নিয়েও ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে