বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ছোট ফেনী নদীর ভাঙনে তিন উপজেলার মানচিত্র বদলে দিচ্ছে 

আজাদ মালদার, ফেনী প্রতিনিধি
  ২৮ মে ২০২৫, ১৩:৪৫
ছোট ফেনী নদীর ভাঙনে তিন উপজেলার মানচিত্র বদলে দিচ্ছে 
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চর সাহাভিখারী গ্রামের বাঁশবাড়িয়া এলাকায় নদী ভাঙন। ছবি: যায়যায়দিন

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চর সাহাভিখারী গ্রামের বাঁশবাড়িয়া এলাকায় ফেনী ও নোয়াখালীর তিন উপজেলায় ছোট ফেনী নদীর ভাঙন তীব্রতর হয়েছে। এতে শত শত ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কারণে ভূমি হারাচ্ছে তিন উপজেলা। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর উদ্যোগের অভাবে সংকট দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ছোট ফেনী নদীসহ আরও দুটি নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে ফেনী ও নোয়াখালীর ৩টি উপজেলা। এতে কেবল ফেনী জেলারই ১৩ কিলোমিটার অংশে তীব্র ভাঙন হচ্ছে। একইভাবে ভাঙনকবলিত হয়ে পড়েছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাও। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে এখনো নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পূর্ণাঙ্গ চিত্র নেই।

1

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট ফেনী নদীর ভাঙন রোধ ও সমুদ্রের লোনাপানির জোয়ার থেকে রক্ষার জন্য সোনাগাজীর কাজীরহাটে নদীর ওপর ১৯৬১ সালে একটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক তদারকির অভাবে নির্মাণের ৪১ বছর পর ২০০২ সালে রেগুলেটরটি নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালে ৮ মার্চ ছোট ফেনী নদীতে কাজীরহাট রেগুলেটরের ২০ কিলোমিটার ভাটিতে মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী । ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালে রেগুলেটরটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। নির্মাণের ১৪ বছরের মাথায় ২০২৪ সালের ১৭ আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে নদীর দুই পাড়েই এখন তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে।

১৯৬১ সালের কাজীরহাট রেগুলেটর ও ২০১০ সালে নির্মিত মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর পাড়ে রেগুলেটর না থাকায় জোয়ারের পানি ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে গত বছরের বন্যার পর থেকে ভাঙন বেড়েছে বহুগুণ।

গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ফেনীর সোনাগাজীতে বিলীন হওয়া মুছাপুর রেগুলেটর এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন। ওই সময় উপদেষ্টা ওই এলাকায় গণশুনানিতে অংশ নেন। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও কার্যত আট মাসেও কোনো পদক্ষেপ দেখছেন না স্থানীয় লোকজন।

নদী ভাঙনের দৃশ্য দেখছেন এক নারী। সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চর সাহাভিখারী গ্রামের বাঁশবাড়িয়া এলাকায় নদী ভাঙনের দৃশ্য দেখছেন এলাকার মানু জন। সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চর সাহাভিখারী গ্রামের বাসিন্দারা

সরেজমিন ঘুরে সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চরদরবেশ, উত্তর-পশ্চিম চরদরবেশ, চরসাহাভিকারী, চরইঞ্জিমান, তালতলী, তেল্লারঘাট, ফকিরাপুল, ইতালি মার্কেট এলাকা, চর মজলিশপুর ইউনিয়নের বদরপুর, মিয়াজীর ঘাট গ্রাম, বগাদানা ইউনিয়নের জেলেপাড়া, কুঠিরহাট কাটাখিলা, কালীমন্দির, আউরারখিল, আদর্শগ্রাম, কাজীরহাট স্লুইসগেট, আলমপুর, ধনীপাড়া, সাহেবের ঘাট, মিয়াজীঘাট, চরমজলিসপুর, দাগনভূঞা উপজেলার জগতপুর, তালতলি,ভাষাশহীদ সালাম নগর গ্রাম, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর গ্রাম, মাচ্চাঘোনা, পূর্ব চরহাজারী ও চরপার্বতী ইউনিয়নের পূর্ব চরপার্বতী গ্রামের নদী উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা গেছে। ইতিমধ্যে কয়েকশ’ পাকা ও আধা পাকা বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

নদীর তীব্র ভাঙনে মানুষজন ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ছোট ফেনী নদীর জোয়ারের পানির তোড়ে কাজীরহাট থেকে বাংলাবাজার পাকা সড়কের প্রায় ৫০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে বাজারের উত্তরাংশে বসবাস করা মানুষজন একমাত্র রাস্তাটি হারিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সোনাগাজী ও পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কৃষিনির্ভর ব্যবসায়ীরা। ভাঙন অব্যাহত থাকায় মানচিত্রে ছোট হয়ে আসছে তিনটি উপজেলা। আশ্রয়হীন বাসিন্দরা।

ভাঙনে বিলীন মুছাপুর রেগুলেটর, চর মজলিশপুর ইউনিয়নের মিয়াজীঘাট গ্রামের দিনমজুর মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর বাড়িসংলগ্ন মিয়াজীঘাট থেকে কাজীরহাট মুছাপুর গেট পর্যন্ত সড়কটি নদীভাঙনে বিলীন হতে চলেছে। সড়কের এক মাথার ৯০ শতাংশ নদীতে বিলীন হওয়ায় সড়কসংলগ্ন তাঁর বাড়িটি যেকোনো সময় নদীতে তলিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে তাঁর প্রতিবেশীদের তিনটি বাড়ি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে