২০২৪ সালে প্রবাসে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড ছুঁয়েছে। এ বছর ৪ হাজার ৮১৩টি মৃতদেহ দেশে ফেরত আনা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৫৫২।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (আরএমএমআরইউ)-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মৃতদের গড় বয়স ছিল ৩৮ বছর।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে 'বিদেশে মৃত অভিবাসী শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিতকরণ'- শীর্ষক এক সংলাপে আরএমএমআরইউ-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, 'এত তরুণ মানুষ কীভাবে মারা যাচ্ছে? বাংলাদেশ সরকার মৃতদের মৃত্যু সনদে উল্লিখিত কারণগুলোর সত্যতা যাচাই করতে কোনো ময়নাতদন্ত করে না।'তিনি আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও মৃত্যু সনদে তাকে 'স্বাভাবিক মৃত্যু' বলা হয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, গালফ ও অন্যান্য আরব দেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে যেসব বাংলাদেশি নারী অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের গড় বয়স ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উন্নত দেশ ও শ্রমিক গ্রহণ করে না—এমন এশীয় দেশের তুলনায় অন্তত ১০ বছর কম।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণায় বলা হয়েছে, নারী অভিবাসীদের মৃত্যুর প্রায় ৩২ শতাংশকে আনুষ্ঠানিকভাবে 'অস্বাভাবিক মৃত্যু' হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্ঘটনা, হত্যা ও আত্মহত্যা অন্তর্ভুক্ত।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য হারে অভিবাসী শ্রমিক বিদেশে কাজ শুরুর অল্প সময়ের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন।
মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে গবেষণায় বলা হয়েছে, মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ শ্রেণিবদ্ধ করার কোনো মানসম্মত পদ্ধতি নেই। মোট মৃত্যুর মধ্যে ৬৯ শতাংশকে 'স্বাভাবিক মৃত্যু' হিসেবে এবং ৩১ শতাংশকে 'অস্বাভাবিক মৃত্যু' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সৌদি আরবে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর হার ২৪ শতাংশ।
অস্বাভাবিক মৃত্যুর তথ্য কেবল শ্রমিক গ্রহণকারী দেশগুলোতেই রেকর্ড করা হয়েছে। শ্রমিক গ্রহণ করে না এশীয়ার এমন দেশগুলোতে এবং উন্নত পশ্চিমা দেশগুলোতে কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যুর তথ্য নেই।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, নিহত নারী অভিবাসীদের পরিবারের ৪৮ শতাংশ সদস্য মৃত্যু সনদে উল্লেখিত কারণকে বিশ্বাস করেন না। কারণ, অনেক সময় গন্তব্য দেশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন মৃতদেহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলেও পুনঃপরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।
এছাড়া, প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত আরেকটি মৌলিক সমস্যা হলো ঢাকার বিমানবন্দরে তাদের মরদেহ অপমানজনক ও অসংবেদনশীলভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃতদেহ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে ৮০ শতাংশ পরিবারকে নানা ধরনের প্রশাসনিক জটিলতা ও ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে।