শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দুটি কিডনিই বিকল, বাঁচতে চান প্রবাসী হামিদ

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ২৯ মে ২০২৫, ২০:৪৩
দুটি কিডনিই বিকল, বাঁচতে চান প্রবাসী হামিদ
ছবি: যায়যায়দিন

দীর্ঘ ৭ বছর আগে প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাতে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের প্রবাসী আব্দুল হামিদ। স্বপ্ন ছিল পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার, সন্তানকে ভালো ভবিষ্যৎ দেওয়ার। সৌদি আরবের ওষুধের দোকানে চাকরি করে তিনি ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছিলেন এক নিশ্চিন্ত সংসার। কিন্তু ভাগ্য তার জন্য বয়ে এনেছে নির্মম এক পরিণতি।

প্রবাসে থাকা অবস্থায় শরীরে বাসা বাঁধে মরণব্যাধি। আজ তিনি ২টি কিডনি হারিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। চিকিৎসা করাতে করাতে এখন সর্বস্বান্ত আব্দুল হামিদ। তার দুটি কিডনিই সম্পূর্ণরূপে বিকল। ঢাকার ইনসাফ বারাকা কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হকের তত্ত্বাবধানে চলছে তার নিয়মিত ডায়ালাইসিস। বাঁচতে হলে প্রয়োজন কিডনি প্রতিস্থাপন। ব্যয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা কিন্তু এতো অর্থ জোগাড়ের সাধ্য নেই তার পরিবারের। প্রবাসে অর্জিত সঞ্চয় চিকিৎসা খরচে শেষ। স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তার পরিবারের আজ দুঃসহ জীবন। এখন সমাজের হৃদয়বান ও দয়ালু মানুষের কাছে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন আব্দুল হামিদ।

1

২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে যান আব্দুল হামিদ। প্রথমে আত্মীয়ের দোকানে কাজ করলেও পরে একটি ওষুধের দোকানে স্থায়ীভাবে চাকরি শুরু করেন। ভালোই চলছিল সব। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে হঠাৎ পিঠে অসহ্য ব্যথা শুরু হয়। রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধ নেন, তবে অবস্থার উন্নতি হয়নি। আত্মীয়স্বজনের কথামতো দেশে ফেরেন চিকিৎসার জন্য। দেশে ফিরে ছুটতে থাকেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রাইভেট ও সরকারি হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে চিকিৎসকরা জানান—তার দুটি কিডনি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।

বর্তমানে রাজধানীর ইনসাফ বারাকা কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে হামিদকে। প্রতিবার খরচ হয় প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এর পাশাপাশি ওষুধ ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাসিক খরচ দাঁড়ায় কয়েক লাখ টাকা।

হামিদের শ্বশুর মো. পারভেজ বলেন, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করাতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এই টাকার এক তৃতীয়াংশ জোগাড় করতেও আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই দেশের মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইছি।

আব্দুল হামিদ কান্নাভেজা গলায় বলেন, আমি সুস্থ হতে চাই। আমার ছোট্ট ছেলেটার মুখ চেয়ে বাঁচতে চাই। আমি জানি না ভবিষ্যৎ কেমন, কিন্তু মানুষের সাহায্যে যদি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারি, হয়তো আবারও হেঁটে বেড়াতে পারবো। আমি দেশের প্রধান উপদেষ্টাসহ সবার কাছে অনুরোধ করছি, আমাকে সাহায্য করুন।

আব্দুল হামিদের প্রতিবেশী মো. ফারুক বলেন, ওর চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য এখনই বিপুল পরিমাণ টাকা দরকার। একা একা এই খরচ চালানো অসম্ভব। তাই সবাই যদি এগিয়ে আসে, তাহলে হয়তো সে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।

ছদাহা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান বলেন, হামিদ খুবই ভদ্র ও পরিশ্রমী ছেলে। পরিবার চালাতে বিদেশে গিয়ে সব করেছে। আজ জীবন-মরণ সংকটে পড়েছে। আমি তাকে সাধ্যমতো সাহায্য করেছি। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ, আমাদের এলাকার এই ছেলেটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে